এগারতম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে এবং একই দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আধিপত্যের অবস্থান ধরে রাখলো এবারের ক্রিকেট মহারণের দুই স্বাগতিক দেশ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ সময় গত কাল ভোর৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৯৮ রানের জয় পায় নিউজিল্যান্ড দল। আর একই দিনে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০মিনিটে শুরু হওয়া ম্যাচে ১১১ রানের সহজ ও বিশাল জয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে অজিরাও।প্রথম ইনিংসে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড দলগতভাবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও দারুণ খেলে গ্র“প পর্বের প্রথম ম্যাচে ৯৮ রানের সহজ জয় তুলে নেয়। ম্যাথিউজ বাহিনীকে ২৩৩ রানে আটকিয়ে দিয়ে এ জয় পায় ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩২ রানের জয়ের টার্গেটে খেলতে নেমে দলীয় ৬৭ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে লঙ্কানদের।
ম্যাচের ১৩তম ওভারে ভেট্টরির করা শেষ বলে কট অ্যান্ড বোল্ডের শিকার হন দিলশান। আউট হওয়ার আগে এ ওপেনার করেন ২৪ রান। এরপর ২১তম ওভারের শেষ বলে ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন থিরিমান্নে। আউট হওয়ার আগে তিনি ৬০ বলে ৬৫ রান করেন, যা কিনা তাৎক্ষনিকভাবে শ্রীলঙ্কাকে খেলায় ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু সে আশায় ভঙ্গ হলো পরের ওভারেই। ওই ওভারের শেষ বলে শুন্য হাতেই ফেরেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। এখানেই শেষ নয়, ট্রেন্ট বোল্টের বলে এলবি ডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি ৩৮ বলে ৩৯ রান করেন। পরক্ষনেই অ্যাডম মিলনের শিকারে সাজঘরে ফেরেন করুনারানত্মে এবং মেন্ডিস। তবে ৬ উইকেট পতনের পর লংকানদের হয়ে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন দলপতি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। তিনি ৪৬ রান করে টিম সাউদির বলে ভেট্টরির হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন। একই ওভারে সাউদি ফেরান মালিঙ্গাকেও। স্বাগতিকদের হয়ে দু’টি করে উইকেট নিয়েছেন সাউদি, বোল্ট, মিলনে ও ভেট্টরি। এর আগে উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নেমে নিউজিল্যান্ড কোরি অ্যান্ডারসন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কেন উইলিয়ামসন আর মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে ভর করে বড় টার্গেটে ছুঁড়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। ৬ উইকেটে নির্ধারিত ৫০ ওভারে কিউইরা করে ৩৩১ রান। শ্রীলঙ্কা টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানায় স্বাগতিকদের। প্রথম ইনিংসে কোরি অ্যান্ডারসন ৪৬ বলে ৭৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে আউট হন। কিউই দলপতি ম্যাককালাম করেন ৬৫ রান। এছাড়া ৫৭ রান করেন উইলিয়ামসন আর ৪৯ রান করেন ওপেনার গাপটিল।
এদিকে এবারের বিশ্বকাপ আসরের দ্বিতীয় ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের মালা গলায় পরে আনন্দে ভাসে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া। জেমস টেইলরের হার না মানা প্রতিরোধের পরেও ১১১ রানের বিশাল ব্যবধানের পরাজয় এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড দল। মিশেল মার্শ, মিশেল স্টার্ক ও মিশেল জনসনের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার। ৩৪৩ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করতে নেমে ২৩১ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন জেমস টেইলর, কিন্তু তাকে সঙ্গ দেননি কেউই। টেইলর অপরাজিত থাকেন ৯৮ রানে।
দলীয় স্কোর একশ’ না পেরুতেই ইংল্যান্ডের ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন অজি পেসাররা। অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার মিশেল মার্শ একাই ধসিয়ে দেন তাদের টপ অর্ডার। মার্শ ৯ ওভার বল করে ৩৩ রান খরচে নেন ৫ উইকেট। অন্যদিকে মিশেল জনসন ৮ ওভার বল করে ৩৬ রানে নেন ২ উইকেট। একই সঙ্গে মিশেল স্টার্ক ৯ ওভার বল করে ৪৭ রানে নেন ২টি উইকেট। ১১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে নেমে রানআউটের শিকার হন জেমস অ্যান্ডাসন। প্রথম দিকে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া ইংল্যান্ড দল জেমস টেইলর ও ক্রিস ওকসের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাও ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার গতিদানব মিশেল জনসন। জনসনের বলে স্মিথের কাছে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন ওকস। পরের ওভারের প্রথম বলেই স্টুয়ার্ড ব্রডকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন মিশেল স্টার্ক। টপ অর্ডারে ইয়ান বেল (৩৬) ছাড়া আর কেউ দশের কোটা পেরুতে পারেননি। এরপর জেমস টেইলর একপ্রান্ত আগলে রেখে হাল ধরেন দলের। ইনিংসের ১৪তম ওভারে মিচেল মার্শের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ইয়ান বেল ও জো রুটকে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের ধারা অব্যাহত থাকে ইংলিশদের।
ইনিংসের শুরুতেই হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। ৫ম ওভারে মিশেল স্টার্কের বলে জর্জ বেইলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মঈন আলী। এরপর দশম ওভারের চতুর্থ বলে মিশেল মার্শ ফেরান গ্যারি ব্যাল্যান্সকে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ তিন বলে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশ ফাস্ট বোলার স্টিভেন ফিন বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক পূর্ণ করলেও, অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড় থামাতে পারেননি। ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করে বিশ্বকাপের ১১তম আসরে স্বাগতিক অজি ব্যাটসম্যানরা বড় সংগ্রহ দাঁড় করায়। টসে হেরে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চের সেঞ্চুরি, অধিনায়ক জর্জ বেইলির দায়িত্বশীল অর্ধশতক এবং শেষ দিকে ম্যাক্সওয়েল ও ব্র্যাড হ্যাডিনের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩৪২ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের ফিন ১০ ওভারে ৭১ রানের বনিমিয় পাঁচ উইকেট নেন।