গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া এলাকায় বালু ভরাট করে লবলং নদী দখল করে নিচ্ছে ডেকো গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে লবলং নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নয়নপুর চকপাড়া সংযোগ সড়কের ব্রিজ থেকে দক্ষিণ দিকে লবলং নদীর পাড় এবং নদীর আংশিক ডাম্প ট্রাক দিয়ে বালি ফেলে ভরাট করে দখলে নিচ্ছে ডেকো গার্মেন্টস নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নদীর পাড় এবং নদীর অর্ধাংশে বালি ফেলে ডেকো গার্মেন্টসের রাস্তা তৈরি করতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী বা খালের দুই পাশ দখল করে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় গতিপথ সরু হয়ে গেছে। ওইসব কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নদীতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীরবর্তী নিচু ফসলি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় অনাবাদি রয়েছে কয়েক বছর ধরে। নদী দখলমুক্ত ও ফসলি জমি রক্ষার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। পরিবেশ দূষণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন খান বলেন, লবলং নদীটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্যের চিত্র। বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকেরা এবং এলাকার কিছু চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা যেন খাই দাই দখল করে নদীটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। লবলং নদীর শেষ অস্তিত্বটুকুও ভরাট করে রাস্তা বানিয়ে নিচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে চাঁদাবাজির মামলা খেতে হয়। লবলং নদী ভরাটের ফলে কৃষি জমিতে সবসময় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি আমাদের লবলং নদীকে রক্ষা করুন। না হলে লবলং নদীর পাড়ের কৃষকদের না খেয়ে থাকতে হবে।
নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সফি কামাল বলেন, শ্রীপুরের নদীগুলো যাঁরা বেশি ভোগ করছে, তারাই আবার দখল করছে। নদীটা আজ বিলুপ্তির পথে, সেটাকে আর বাঁচানো সম্ভব না।
নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও রসায়নবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এই তরল বর্জ্যে রয়েছে বিষাক্ত ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর লেড, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল, প্লাটিনাম, সায়ানাইড, কপার, ক্যাডমিয়াম, অ্যান্টিমনি, মার্কারি ও জিঙ্ক। যা মানবদেহ ও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ। অনতিবিলম্বে শ্রীপুরের সব খালের সীমানা নির্ধারণ করে খালগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং পুনঃখনন করতে হবে। নতুবা এ জনপদ বাঁচানো যাবে না।’ সংবাদকর্মী শিহাব খান বলেন, ‘একসময় এ খালগুলো দিয়েই শ্রীপুর উপজেলার পানি নিষ্কাশন হতো। লবলং দখল ও দূষণমুক্ত করতে প্রশাসনকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী বা খালের দুই পাশ দখল করে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় গতিপথ সরু হয়ে গেছে। ওইসব কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নদীতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীরবর্তী নিচু ফসলি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় অনাবাদি রয়েছে কয়েক বছর ধরে। নদী দখলমুক্ত ও ফসলি জমি রক্ষার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। পরিবেশ দূষণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
ডেকো গার্মেন্টসের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) তাপস বলেন, আমরা খালের পাশের জমি ক্রয় করে রাস্তা নির্মাণ করছি। আমরা লবলং নদী জবরদখল করিনি, তবে বালু ভরাটের সময় নদীর পাড় ভেঙে নদীর ভেতর বালি চলে গেছে, আমরা বালিগুলো উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ জানান, ইতিমধ্যে আমি বিষয়টি অবগত করেছি। নদী জবরদখল করে রাস্তা নির্মাণ এটা কীভাবে সম্ভব? দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।