শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল জীবিত!

 

 

 

 

 

 

 

অন্যান্য ডেস্ক:

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সবচেয়ে পরিচিত প্যারাডক্স সম্ভবত শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল, যা কিনা কোয়ান্টাম সুপারপজিশন প্রদর্শক সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যা বলে যে কোন বস্তু একই সাথে দুইটি ভিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে না , কিন্তু কোয়ান্টাম সুপারপজিশন বলে পারে ! সংক্ষেপে চোখ বোলানো যাক শ্রোডিঞ্জারের বিড়ালের উপর। ধরা যাক, একটি বিড়ালকে বাইরের পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে একটি বাক্সে বন্দী করা হলো এবং বাক্সের ভেতর রাখা হলো এক বোতল বিষাক্ত সায়ানাইড। এখন বাক্সের রাখা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ ক্ষয় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষাক্ত সায়ানাইড মুক্ত হবে এবং বিড়ালটি তাৎক্ষণিকভাবে মারা যাবে। তেজস্ক্রিয় ক্ষয় প্রক্রিয়াটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়ম দ্বারা শাসিত। এর ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থটি সম্ভাব্য দুটি অবস্থায় থাকতে পারে, হয় ক্ষয়প্রাপ্ত বা ক্ষয়প্রাপ্ত নয়। তার মানে এই যে বিড়ালটিরও সম্ভাব্য দুটি দশা, মৃত অথবা জীবিত। অর্থাৎ বিড়ালটি সুপারপজিশন অবস্থায় থাকে। এখন বাক্সের ভেতর উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হলে বিড়ালের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, কারণ তেজস্ক্রিয় পদার্থটির কোয়ান্টাম অবস্থা এতটাই স্পর্শকাতর যে সামান্য হেরফেরেই তা ক্ষয় হওয়া শুরু করবে। মানে, বিড়ালটি মারা যেতে পারে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা করা মাত্রই! কিন্তু একদল বিজ্ঞানী বলছেন ভিন্ন কথা , তাদের মতে বিড়ালটির মৃত্যুর ঝুঁকি না নিয়েও বাক্সের ভিতরের অবস্থা কিছুটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব! অর্থাৎ কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা নষ্ট না করেও তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। পদার্থবিদদের এই দলটি তাদের গবেষণার উপর ভিত্তি করে ছোট আকারের কোয়ান্টাম সুপারপজিশন তৈরি ও পর্যবেক্ষণের একটি উপায় প্রস্তাব করেন ।

তাদের মতে যা করা লাগবে তা হল:
একটি তার (রিৎব) কে আবদ্ধ বাক্সের ভিতরে রাখতে হবে এবং সুপারপজিশন অবস্থা তৈরির জন্য তারটিকে এমন ভাবে স্পন্দিত করতে হবে যাতে তারটি উভয় দিকেই সমান ভাবে স্পন্দিত হয়। সিস্টেমটি সুপারপজিশনে পৌঁছানোর পর এর ভিতর দিয়ে একটি তড়িৎ চার্জ প্রবাহিত করতে হবে যা কিনা একটি তাড়িত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করবে। এবং এই তাড়িত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি বাইরে থেকে সেন্সর দারা পর্যবেক্ষণ করা যাবে । যেহেতু , কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সব নিয়ম ভাঙ্গা সম্ভব নয় , তাই সেন্সরটি চার্জের দিক কিংবা তারের অবস্থান জানাতে পারবে না । তবে , সেন্সরটি থেকে জানা যাবে কখন তারটি সুপারপজিশন অবস্থা ত্যাগ করবে অর্থাৎ তারটি তার স্বাভাবিক স্পন্দন ছাড়া অবস্থায় আসবে। এ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা সুপারপজিশন অবস্থা নষ্ট না করেও বাক্সের ভিতর সম্পর্কে আভাস পেতে সক্ষম হবেন। দুর্ভাগ্যবশত , পরীক্ষাটি হতে আরও কয়েক বছর বাকী। বিজ্ঞানীদের দলটির এমন একটি সেন্সর দরকার যা অতিক্ষুদ্র স্কেলে নির্ভুল মান দিতে সক্ষম ও বাহ্যিক প্রভাব মুক্ত । এটি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে । বাস্তব জীবনে যদি সত্যিই সুক্ষ কোয়ান্টাম সিস্টেম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় , তবে তা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে ।

Comments (0)
Add Comment