হরতাল-অবরোধসহ চলমান সহিংসতায় সেশনজটের থাবায় বিপন্ন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন। ছন্দপতন ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষাপঞ্জিতে। গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনির্ধারিত ছুটির কারণে সেশনজটের রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ-হরতালের কারণে নতুন করে সেশনজটে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের শিক্ষাজটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত বছর ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে অনেকদিন ক্লাস হয়নি। আগামী এপ্রিল থেকে চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু হরতাল অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখনো চতুর্থ বর্ষের ২০ শতাংশ ক্লাসও সম্পন্ন হয়নি। ফলে এপ্রিলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এতে বড় ধরণের সেশনজটে পড়তে হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ শিক্ষার্থী।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, হরতাল অবরোধে ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না এ কথা ঠিক নয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ও শিক্ষকদের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের মধ্যেও আমরা ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে কাজ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, সহিংস ঘটনা, ছাত্রসংগঠনগুলোর বিবাদমান কোন্দল, শিক্ষক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সেশনজটের কবলে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুলকে ‘লাঞ্ছনাকারীদের’ বিচারের দাবিতে গত বছরের ৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতদিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ সমর্থিত শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন চ্যুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি)। ২৩ জুন ভিএক্স-সিএফসি দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নির্ধারিত ছুটি থেকে ৭দিন বাড়িয়ে বর্ষাকালীন ছুটি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ৩১ আগস্ট থেকে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় ছাত্র শিবির। ধর্মঘট চলাকালে ১০ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী ফতেয়াবাদ ছড়ারকুল এলাকায় শিক্ষকবাহী বাসে বোমা হামলা চালায় শিবিরের কর্মীরা। হামলায় ১২ শিক্ষকসহ প্রায় ১৭ জন গুরুতর আহত হন। পুরো মাসজুড়ে শিবিরের ও শিক্ষকদের নানা আন্দোলন কর্মসূচিতে অচল হয়ে পরে বিশ্ববিদ্যালয়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঈদ ও পূজার ছুটি ১৭ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪৪ দিন করা হয়। যার ফলে অনির্ধারিতভাবে (ভর্তি পরীক্ষা বাদে) ১৭ দিনের জন্যে বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস। গত ৯ নভেম্বর থেকে টানা তিনদিন অবরোধ পালন করে সিএফসি কর্মীরা। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন জোট লাগাতার অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা ও ক্লাস হচ্ছে না। হরতাল ও অবরোধের দিন বাদ দিয়ে শুধু সপ্তাহের শনিবার ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে ভয়াবহ সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এদিকে হরতাল অবরোধের কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস এখনো শুরু হয়নি। এ অবস্থায় সেশনজটে আটকা পড়ে দীর্ঘতর হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। চলমান সহিংস ঘটনা, ছাত্রসংগঠনগুলোর বিবাদমান কোন্দল, শিক্ষক সংকট সব মিলিয়ে সেশনজট অসাভাবিক হারে বাড়তে পারে বলে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের আশঙ্কা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, “দেশে চলমান হরতাল অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ সেশনজটে পড়বে। এতে তাদের শিক্ষা জীবন বিলম্বিত হবে। যদি এভাবেই সহিংস ঘটনা চলমান থাকে তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।”