এটি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চোরমর্দন গ্রামের চিত্র। এ গ্রামে মৃৎ শিল্পের ইতিহাস শত বছরের। এক সময় এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলাগুলোর হাটবাজারেও বিক্রি হতো এখানকার তৈরি জিনিসপত্র।
কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক- মেলামাইন সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ, মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থলির চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেলেও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চোরমর্দন গ্রামে তা সচল রয়েছে।
এই গ্রামে মোট ৯০ টি পরিবারের মধ্যে কুমার পরিবারের সংখ্যা ৪৬। এসব পরিবারের শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। তবে প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ স্বর্নের কাজ, বিদেশে, কেউবা কামারের কাজ করছে।
জানা যায়, এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে, কেউ ব্যস্ত এগুলো পোড়ানোর কাজে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজে।
চোরমর্দন গ্রামের সুমন পাল জানান, চৈত্র- বৈশাখ এ দু`মাসে রোদেও তেজ বেশি থাকায় তাদের কাজও বেশি হয়।
একই গ্রামের মিন্টু পাল বলেন, এখন কাজের চাপ খুব কম। তাই বেকার না থেকে পাশাপাশি অন্য কাজ করার চিন্তা করছি।
মন্টু পাল অভিযোগ করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই বাপ দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র। তবে সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে মাটির তৈরি জিনিসের দামটা একটু বারতো এবং প্লাস্টিকের পন্যকে কমিয়ে বাজারে স্থান দিতো তাহলে এই মাটির শিল্পটি বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যেতো। বিডিপত্র/আমিরুল