সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সিলেটে গেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত দল। ওই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার দুপুর ১২টায় হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
তদন্ত দলটি প্রথমে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বেলা ১টার দিকে তারা হাসপাতালের ২১, ২২ ও ২৩ নং শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এম এ সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তাদের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দলও কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল গঠিত কমিটি সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।”
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিশুসহ ৩২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে অধিক হারে মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
হাসপাতালের ডেথ রেজিস্টার অনুযায়ী, এখানে গত জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে দুজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর মাসে গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ থেকে ১৬। অথচ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেল ১০ শিশু! বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও।
যে ১০ শিশু মারা গেছে তারা হলো: সিলেট নগরের শেখঘাটের নিলুফা আক্তারের দেড় দিনের শিশু, একই এলাকার ফাতেমা বেগম ও সন্ধ্যা রানীর এক দিনের করে দুই নবজাতক, জকিগঞ্জের দশগ্রামের আকাশ (সাত দিন), সিলেটের গোয়াইনঘাটের সায়মা (দেড় বছর), সুনামগঞ্জ সদরের মাহাদি (আড়াই মাস), তাজরিয়া (সাড়ে তিন বছর), ছাতকের সাফরাজ (তিন বছর), বিশ্বম্ভরপুরের নাদিরা (ছয় মাস) ও হবিগঞ্জের ইয়াসমিন (তিন দিন)।
তাদের মৃত্যুর কারণ জন্মগত ত্র“টি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াজনিত বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তারা জানায়, শিশুদের যে ওষুধ দেয়া হয়েছে তার মেয়াদ, কোন মাত্রায় কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং চিকিৎসায় কোনো রকম গাফিলতি হয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ১০ শিশু ছাড়াও ওই ২৪ ঘণ্টায় আরো যে ১৩ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে চারজন, হৃদযন্ত্রের সমস্যায় পাঁচজন এবং যক্ষ্মা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এনকেফালাইটিস ও অজ্ঞাত বিষক্রিয়ায় একজন করে রোগী মারা গেছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। এ ছাড়া সিলেটের একটি গ্রামে মারামারির ঘটনায় আহত পাঁচজন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।