নোয়াখালী প্রতিনিধি:
একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল ইসলাম শুভ সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামের নজীর আহমেদের ছেলে এবং পেশায় একজন সিএনজি চালক। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামী করে সোনাইমুড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সতর্ক করণে প্রচারণায় সিএনজিতে করে কয়েকজনসহ পাশ্ববর্তী কাবিলপুর গ্রামে যায় রফিকুল ইসলাম শুভ। এসময় দ্রুতগতিতে সিএনজি চালানোকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের স্থানীয় কতিপয় যুবকদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় শুভর। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারি হয়। এসময় রফিকুল ইসলাম শুভসহ তার সহযোগীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
“পরেরদিন সকালে মোবাইল ফোন ফিরিয়ে আনতে কাবিলপুর গ্রামে গেলে শুভ ও তার সহযোগীদের আটক করে। এ নিয়ে আবারও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ফের সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয় গ্রামে ডাকাত পড়েছে। ফলে আশেপাশের এলাকা থেকেও লোকজন ছুটে আসে। এসময় শুভ ও তার সহযোগীদের বেধমভাবে প্রহার করা হয়। পরে কাবিলপুর গ্রামের অভিযুক্ত আসামীরা শুভকে প্রথমে গাছের সঙ্গে বাধে। পরে তাকে বস্তাবন্দি করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে।”
পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুরতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। পরে গুরতর আহত শুভকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়ার পথে শুভর মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদক সরেজমিনে শুভর মরদেহে এলোপাতাড়ী কোপের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে, হাত ও পায়ে কোপের চিহ্ন রয়েছে, মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে কাবিলপুর গ্রামের অভিযুক্ত কতিপয় যুবক পলাতক রয়েছে এবং গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। শুভর অকাল মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কিশোর ছেলের মৃত্যু যেন মেনেই নিতে পারছে না তার বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা। ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে সোনাইমুড়ি থানার তদন্ত ওসি ইমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, করোনা সতর্ক করনে শুভ তার সহযোগীদের নিয়ে কাবিলপুর গ্রামে গেলে সেখানে স্থানীয় কতিপয় যুবকের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপর পরেরদিন ফের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে শুভর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মসজিদে গুজব রটিয়ে শুভকে বেদম প্রহার করে গুরতর জখম করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।