কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জাক জমক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরনের উদ্বোধন করা হয়। আর এর মধ্যদিয়ে ১ বছর ২ মাস পর ভোটার হওয়াসহ নাগরিকত্বের পূর্নতা পেলো ছিটবাসীরা। প্রথম দিনে সদ্য ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত হওয়া অধুনালুপ্ত ছিটবাসীর ২১৯ জনসহ ৯৮৫জনের মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার অভ্যন্তরে বিলুপ্ত অন্যান্য ছিটমহলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরন করা হবে।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মোঃ শাহ্ নেওয়াজ, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব বেগম জেসমিন টুলী, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন ও পুলিশ সুপার মোঃ তবারক উল্ল্যা প্রমুখ।
১৯৭৪ এ ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ও ২০১১ সালে হাসিনা-মনমোহনের প্রটোকল স্বাক্ষর পরবর্তীতে ভারতের লোকসভায় চুড়ান্ত অনুমোদনে মুক্তির স্বপ্ন দেখে দু’দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২ টি ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার মানুষ। এরপর ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে বিলুপ্তী ঘটে ছিটমহল নামটি। এরপর থেকে ছিটমহলের উন্নয়নে নানা কর্মকান্ড চললেও জাতীয় পরিচয় ছিলনা তাদের।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়ে খুশি বিলুপ্ত ছিটের মানুষেরা। ভোটাধিকার প্রয়োগ, ব্যাংক হিসাব, চাকুরীর আবেদন, বিয়ে ও তালাক রেজিষ্ট্রেশনসহ ২২টি সেবাখাতের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া দাসিয়ার ছড়ার ছোট কামাত গ্রামের ইব্রাহীম খা (৬০) জানান, শেষ বয়সে এসে বাংলাদেশের পরিচয় পত্র পেয়েছি। এখন থেকে ভোট দিতে পারবো, জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে সব জায়গায় ঘুরতে পারবো এটাই বড় পাওয়া।
দাসিয়ার ছড়ার মোছাঃ চম্পা খাতুন (৩৫) বলেন, আগে আমাদের ছেলে-মেয়ে ভুয়া পরিচয়ে লেখা-পড়া করতো এখন আর ভুয়া পরিচয়ে লেখা-পড়া করতে হবে না। আমরা এই জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে দেশের সকল সুবিধা ভোগ করবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়ে মহা আনন্দিত হয়েছে মছিরন বেগম ও মজনু শেখসহ স্মার্ট কার্ড পাওয়া ছিটমহলের মানুষেরা।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার মাধ্যমে অবসান হয়েছে পরিচয়হীনতার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নাগরিকত্বের সকল মৌলিক অধিকার নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষেরা।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরন অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজি রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, অধুনালুপ্ত ছিটমহলের মানুষের হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র তুলে দিতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। আপনার দীর্ঘ ৬৮ বছর অনেক কষ্ট করেছেন আর কষ্ট করতে হবে না। এই স্মার্ট কার্ড পাওয়ার মাধ্যমে আপনারা আপনাদের নাগরিক অধিকার পাবেন।
বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষগুলোর একে একে রাষ্ট্রীয় সকল মৌলিক অধিকার পূর্ণ হওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন বাঙ্গালী ও বাংলাদেশের মূল ¯্রােত ধারায় নিজেদেরকে মিশিয়ে দেয়ার।
উল্লেখ্য, ছিট বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিট মহলের ৩৭হাজার ৩শ ৬৯জন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিট মহলের ১৪ হাজার ২শ ১১ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পায়। বাংলাদেশ পায় ১১১টি ছিট মহলের ১৭ হাজার ২শ ৫৮ একর জমি এবং ভারত পায় ৫১টি ছিট মহলের ৭হাজার ১১০ একর জমি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রামে-১২, লালমনিরহাটে-৫৯, পঞ্চগড়ে-৩৬ এবং নিলফারী জেলায় -৪টি। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ৪৭টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় ৪টি।