হবিগঞ্জে ‘আমেরিকান অ্যাপসের’ খপ্পরে নিঃস্ব অনেক পরিবার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জে কথিত ‘আমেরিকান অ্যাপস’র খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। একাউন্ট খুলে টাকা জমা করলে পরিশ্রম ছাড়াই উপার্জনের লোভে হুমড়ি খেয়ে পরা এসব মানুষদের অনেকে সহায়-সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কার্যক্রম চালানোর জন্য দুলিয়াখাল বাজারে ডব্লিউএলটিসি নামক অ্যাপটির একটি কার্যালয়ও খোলা হয়েছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হতে অফিস তালাবদ্ধ করে কথিত এজেন্টরা গা ঢাকা দিয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডব্লিউএলটিসি নামের একটি অ্যাপস নিয়ে কথিত ব্যবসা শুরু করে হবিগঞ্জ সদরের ধুলিয়াকাল গ্রামের কয়েকজন এজেন্ট। কার্যালয় করা হয় সদরের দুলিয়াখাল বাজারে। তবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হতে তাদের অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে।

আরও জানা যায়, অ্যাপস ইনস্টল করে ১২ হাজার টাকা (১১০ ডলার) ঢুকালে প্রতিদিন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই ৫শ’ টাকা করে উপার্জন হবে এমন লোভ দেখাতো তারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা সাধারণ যুবক ও উঠতি বয়সী তরুণদের এসব লোভ দেখাতো তারা। এছাড়াও নতুন সদস্যকে জয়েন্ট করাতে পারলে প্রতিজনে ৮শ’ টাকা বাড়তি পাওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো তাদের। বিশেষ করে এদের টার্গেট ছিল নারীরা। চার সদস্য বাড়ালে এক লক্ষ ৭৫ হাজার এবং ১০ জন সদস্য বাড়ালে ৪ চার লক্ষ টাকা কোম্পানির বোনাস প্রদান করবে বলেও লোভ দেখানো হয়। এজেন্টদের খপ্পরে পরে যুবক-তরুণ ও নারীরা তাদের সহায়-সম্বল বিক্রি করে একাধিক একাউন্ট তৈরি করে। প্রতি একাউন্টে ১২ হাজার টাকা করে জমা করে অনেকে খুলেছেন ৮-১০টি বা তারও অধিক একাউন্ট। হঠাৎ করে কার্যালয় বন্ধ ও এজেন্টরা উধাও হলে ও অ্যাপস বন্ধ হলে ডলার ইনকামের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় এসব মানুষদের।

অনলাইন ঘেটে দেখা যায়, গুগল প্লে স্টোরে অনুমোদিত না হওয়ায় ডব্লিউএলটিসি নামক অ্যাপটির একটি এপিকে ফাইলের লিঙ্ক শেয়ার করে এজেন্টরা। ওয়েবসাইট থাকলেও এজেন্টরা কার্যক্রম বন্ধের পর তাতেও আর ঢোকা যাচ্ছে না। এজেন্টরা অ্যাপসটিকে আমেরিকান বললেও তার সত্যতা পাওয়া যায় নি।

জানা যায়, সদর উপজেলা ধুলিয়াকাল গ্রামের ইসহাক মিয়ার ছেলে কাইয়ুম মিয়া এজেন্ট হিসেবে প্রায় ৬ মাস আগে সর্বপ্রথম অ্যাপসটি নিয়ে কাজ শুরু করে। এজেন্টের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন দিগলবাগ গ্রামের জিলু মিয়া, রইস আলি ও জহিরুল ইসলাম। এদিকে প্রলোভনে পড়ে একজন দু’জন করে করে প্রায় দুই সহস্রাধিক লোক একাউন্ট করে অ্যাপসটিতে। লোভে পরে অনেকে ৮-১০টি একাউন্ট খুলেছেন বলে জানা গেছে। আমেরিকান ডলারের নেশায় পড়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা কেউ গরু, স্বর্ণালংকার বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে জমা করেছে কথিত অ্যাপটিতে। টাকার কারণে এখন অনেক পরিবারে কলহও দেখা দিয়েছে।

দিগলবাগ গ্রামের আমির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তারা আমাকে নানা লোভ দেখানোয় আমি নিজেই ১০টি একাউন্ট খুলে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ঢুকিয়েছি। কিন্তু বোনাস বা টাকা কিছুই পাই নি।

এ বিষয়ে কথিত এজেন্ট কাইয়ুম মিয়ার সাথে কথা বলতে তাদের কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ াকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এমএ মান্নান চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- বিষয়টা তিনি জানেন এবং খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে সদর ানা অফিসার ইনচার্জ গুলাম মর্তুজা ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- এ বিষয় নিয়ে ানায় কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব

Comments (0)
Add Comment