চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে কোটার দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে জাঠ সম্প্রদায়। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় আগ্নেয়গিরির রূপ নিয়েছে হরিয়ানা।
এদিকে জাঠদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঝিন্দও। শনিবার সকালে বিক্ষোভকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ঝিন্দের রেলওয়ে স্টেশনে। ফলে ওই এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। অধিকাংশ জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কে অবরোধ চলতে থাকায় পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা কেটে দেয়ায় বন্ধ হয়েছে গিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহও।
বিক্ষোভকারীদের ওপর আধা-সামরিক বাহিনী গুলিতে শুক্রবার হরিয়ানায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ প্রধান ওয়াই পি সিঙ্ঘল বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ পাল্টা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে এক জন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে আরো দুই জনের মৃত্যু হয়।
হরিয়ানার সরকার জানিয়েছে, জাঠ আন্দোলনকারীদের কোন নির্দিষ্ট নেতা না থাকায় তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা মুশকিল হচ্ছে।
বিক্ষোভে সবচেয়ে উত্তাল রোহতক। শহরে ঢোকার সব রাস্তা কেটে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। শুক্রবারই কারফিউ জারি করা হয় রোহতক এবং ভিওয়ানিতে। এই দুই অঞ্চল ছাড়াও ঝিন্দ, ঝঝ্ঝর, কারনাল, কৈথল, সোনেপত ও হিসার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেছে। সেনা নামানো হয়েছে সর্বত্র।
ভিওয়ানিতে শনিবার সকালে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে সেনাবাহিনী। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে। ভিওয়ানিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি ও মনোহর পর্রীকর।
রাজনাথ সিং ফোনে কথা বলেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের সঙ্গে। আধা-সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩ হাজার ৩শ’ কর্মীকে হরিয়ানা পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। হরিয়ানা সরকারকে সব রকমের সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
রোহতকে শুক্রবার জাঠ বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এরপর তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় মন্ত্রী সেখানে ছিলেন না। তিনি চন্ডীগড়ে ছিলেন। তার পরিবার রোহতকে ছিল। মন্ত্রীর বাসভবনে হামলা হওয়ার পর তার পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিক্ষোভকারীরা রোহতকে একটি শপিং মল, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর মালিকানাধীন একটি স্কুল, বেশ কিছু দোকানপাট এবং টোল প্লাজায় আগুন লাগিয়ে দেয়। বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও রেলপথ অবরোধ করে। ফলে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রোহতকে গত বৃহস্পতিবার মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এতেও বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। শনিবার হরিয়ানার অন্তত ৮টি জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সংরক্ষণের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে জাঠ নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারই বৈঠকে বসেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জাঠ আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, সংরক্ষণের দাবি মেনে নিয়ে হরিয়ানা বিধানসভায় বিল পাস না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।