লালমনিরহাট প্রতিনিধি: গত (২৬ জুন) রোববার মিথ্যা পরকিয়ার অভিযোগে গৃহবধু মনিজা বেগমকে(২৫) একটি শালিস বৈঠকে শশুরবাড়ির লোকজন শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে। ফলে সে এখন হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের বেডে শুয়ে প্রচন্ড শারিরীক যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। এছাড়া এসময় তার শাশুড়ি বছিরন নেছা (৫০) ও রশিদা খাতুন নামের অপর এক মহিলা প্রকাশ্যে তাকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে। সেটির ভিডিও করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযেগে প্রকাশ করেছে প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। শুধুই তাই নয় এ সময় জোর করে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে ওই গৃহবধুর কাছ থেকে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের স্থানীয় মনছুর আলীর উঠানে। এমন নির্যাতনের পরেও ওই গৃহবধুর সেরকম কোন সচেতন অবিভাবক না থাকায় ঘটনাটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছিলো।
মনিজা বেগম(২৫) এর স্বামী সফিয়ার রহমান ও ছেলে মনিরুল ইসলাম(৭) এবং মুজাহিদ(৫) নামের দুই সন্তান নিয়ে তাদের অভাব অনটনের সংসার। ২০০৫ সালের ১০ নভেম্বর বিয়ে হয় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের মৃতঃ সফর আলীর পূত্র সফিয়ার রহমানে সঙ্গে। মনিজা বেগম পাটগ্রাম উপজেলার রসূলগঞ্জ গ্রামের জমির উদ্দিনের মেয়ে। মনিজা বেগমের স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী কিছুটা হওয়ায় কোন কাজ করতে পারেনা। তাই দুই ছেলে সন্তান নিয়ে তাদের সংসার চলে অভাব আর অনোটনে।
এনিয়ে হাতীবান্ধা থানায় একটি মামলা দায়ের হলে ওই মামলায় থানা পুলিশ হামিদুল ইসলাম (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
বুধবার বিকালের দিকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধু মনিজা বেগমের পাশে কেউ নেই একা হাসপাতালে শুয়ে আছে। নির্যাতনের কারণে শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে একাই বেডে শুয়ে কাঁতরাচ্ছে গৃহবধূ মনিজা বেগম। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দাগ। ভালো করে কথা টুকু বলতে পারে না মনজিা বেগম ।
এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের নির্দেশে তাকে সালিশ বৈঠকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার সহজ সরল স্বামী সফিয়ারকেও মারধর করা হয়।
নির্যাতনের স্বীকার মনিজা বেগম বলেন, স্বামীর মানসিক সমস্যা আর সংসারের অভাব-অনটনের জন্য সে সম্প্রতি ঢাকায় গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু সেখানে থেকে কিছুদিন পর বাড়িতে ফিরে আসে সে। ফিরে আসলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ‘পরকীয়ার’ অভিযোগ তুলে তাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি শশুর বাড়ির লোকজন। তাই সে পরে এনিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য বক্তিদের কাছে বিচার চেয়েছিলেন। এরই আলোকে গত রোববার (২৬ জুন) স্থনীয় মনছুর আলীর উঠানে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে শালিশ বৈঠকে বসে। সেখানে তাকে প্রকাশ্যে গাছে বেধে মারপিট করেন শাশুড়ি বছিরন নেছা (৫০) ও রশিদা খাতুন নামের অপর এক মহিলা। এমনকি এসময় কাজি ডেকে তার কাছ থেকে জোর করে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয় বলে অভিযোগ করে সে।
পরে আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয় লোকজন। মঙ্গলবার রাতে এনিয়ে হাতীবান্ধায় থানায় মহিলাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মনিজার শাশুড়ি বজিরন নেছা অবশ্য পুত্র বধূকে মারধরের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সে একজন দুশ্চরিত্রা মহিলা। তাই অন্য কেউ নয়, আমি তাকে শাসন করেছি’।
এ বিষয়ে বড়খাতা ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হলেও আত্বীয়তার সুবাধে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তবে আমরা নিষেধ করার পরেও গৃহবধূ মনিজাকে তার শাশুড়ি মারধর করছে বলে জানান তিনি।
তবে ওই ইউপি সদস্যর অভিযোগ, ঘটনার সময় তার ছেলে হামিদুল উপস্থিত ছিলেন না। অথচ পুলিশ তাকেও বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
নির্যাতন করে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে বড়খাতা ইউনিয়ন কাজী আবুল হাশেম বলেন, উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সফিয়ার রহমানের বাড়িতে তার স্ত্রী মনিজা বেগমের তালাক নামায় স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম হাসান নয়ন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি গৃহবধু মনিজার শরীরে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার সুস্থ্যতার জন্য তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা আংশক্ষাজনক হলে রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানে হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামান সোহেল বলেন, গৃহবধু মনিজার উপর নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার চিকিৎসার দেখভাল করার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, এ ঘটনায় ইউপি মেম্বর আব্দুল গফুরের ছেলে হামিদুল ইসলাম (২৫) কে গ্রেফতার করে বুধবার সকালে লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।