১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী সমাবেশ এবং মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বুধবার (১১ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের গণঅবস্থান মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমরা আজ একটা যুগের সন্ধিক্ষণে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। যখন এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি তখন কেরানীগঞ্জে ৬০০ কর্মী অবর্ণনীয় দুর্দশায় কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। তারা তাকিয়ে আছেন আপনাদের গণআন্দোলনের দিকে। আপনারা তাদের মুক্ত করবেন।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দেউলিয়া দলে পরিণতি হয়েছে। তাই তো পুলিশ, আমলাদের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। তারা নির্যাতন-নিপীড়ন ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার পথ পাচ্ছে না। তাই তো এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের থেকে জনগণ মুক্তি চায়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, এ সরকারের লক্ষ্য একটাই, অন্যায়ভাবে একদলীয় শাষণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা তা করতে দিতে পারি না। তাই এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সরকার হটানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে, সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট নাগরিকরাও এগিয়ে এসেছেন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ১০ দফা নিয়ে সবাই রাজপথে নেমে গেছে। তবে এজন্য আরও শক্তিশালী হয়ে জেগে উঠতে হবে। আসুন জেগে উঠি, জনগণের বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
গণঅবস্থান কর্মসূচির সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি যখনই কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়, সরকার ভীত হয়ে বলে আমরা সহিংসতা করার জন্য কর্মসূচি দেই। কিন্তু নেতাকর্মীরা প্রতিবারই প্রমাণ করে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, আমরা ১০ দফা দিয়েছি, যে দফার ভিত্তিতে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ শুরু করবো, যা এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা জানি সরকার ক্ষমতায় থাকলে এই ১০ দফা মানবে বা। তাই আমরা সরকারের পতন ঘটানোর শপথ নিয়েছি, পরিকল্পনা মাফিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্দোলনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যখন জেল থেকে বের হই, তখন ৪৯১ জন নেতাকর্মী জেলখানায় বন্দি ছিলেন। সবার মুক্তি দাবি করছি। একজন জেলারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ৭-৮ জন কেন একটা রুমে রেখেছেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, জেলখানায় জায়গা নেই। এই যে সারাদেশকে একটি বড় জেলখানায় বন্দি করা হয়েছে। এখানে যারা বসে আছেন, তারাই একদিন আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবে। বিএনপির কোনো নেতাকে ছোট করে দেখার কিছু নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা কাউকে ধাক্কা দিয়ে, টোকা দিয়ে নয়, একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে চাই। ১০ দফা দাবি মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বক্তব্য রাখেন।