সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন তারা। স্মারকিলিপিতে তারা শুধু অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে এ সংক্রান্ত আইন সংস্কারের দাবি জানান। এজন্য আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১২ জনের একটি দল বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা আমাদের স্মারকলিপিটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের হাতে দিয়ে এসেছি। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন, তিনি অতি দ্রুত আমাদের স্মারকলিপিটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেবেন।
তিনি বলেন, আমরা স্মারকলিপিতে স্পষ্ট করে আমাদের এক দফা উল্লেখ করেছি। আমরা বলেছি, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটাগুলোকে বাতিল করে সংবিধান অনুসারে শুধু অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে সংসদে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে থেকে ছাত্রসমাজের এই প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের জন্য অতিসত্বর প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা গত ১ জুলাই থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আমরা যেমন অবরোধ, অবস্থানের মতো কর্মসূচি দিয়েছি, একইভাবে আমরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানের মতো কর্মসূচিও করেছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো প্রকার আশ্বাস পাচ্ছি না। সরকারের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। এখানে আদালতও নির্দেশ দিয়েছেন, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা নাকি দাবি পরিবর্তন করছি এবং দাবি কার কাছে করতে হবে সেটিও পরিবর্তন করছি। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, কোটা সংস্কারের এখতিয়ার সরকারের নির্বাহী বিভাগের। বরং সরকারই সেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে।
নাহিদ আরও বলেন, আমরা স্মারকলিপিতে আমাদের দাবি পূরণে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ২৪ ঘণ্টার সুপারিশ করেছি। আমরা চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদে অধিবেশন ডেকে আইন পাসের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক অথবা অধিবেশন আহ্বান করা হোক। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। আমরা চাই না, আমাদের কোনো ধরনের কঠোর কর্মসূচি অথবা কোনো জনদুর্ভোগমূলক কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য করা হোক। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো—সরকার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব।
আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা বলেছিলাম, আমাদের নামে শাহবাগ থানায় (অজ্ঞাতনামা আসামি করে) যে মামলা করা হয়েছে, সেটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। সেই ২৪ ঘণ্টার সময় আমরা আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমাদের নামে মামলা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোর হবে। এই মামলা দেওয়ার জন্য আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে জবাবদিহিতায় আনতে বাধ্য হবো।
এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি নিয়ে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট দিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন। পরে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন তারা।
রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া ১২ জনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আসিফ, নাহিদ, সারজিস, নিদ্রা, আরিফ সোহেল, সুমাইয়া, আশিক, কাদের, মাহিন, হাসিব, মাসুদ ও সিফাত।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণপদযাত্রা করে শাহবাগ, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পৌঁছান শিক্ষার্থীরা। সেখানে আন্দোলনকারীরা বঙ্গভবন যাওয়ার রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন।
দুপুর দেড়টার পর শিক্ষার্থীরা ওই ব্যারিকেড ভেঙে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেট ধরে এগোতে থাকেন। তবে যানজটের কারণে সেখানে কিছু সময় আটকা পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় সড়কের দুই পাশেই ব্যাপক যানজট দেখা যায়।
পৌনে ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেই নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পর তারা স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তা ধরে এগোতে থাকেন।
২টার দিকে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান আন্ডারপাস মোড়ে (স্টেডিয়ামের কোণে) গেলে ফের পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তবে এখানে কোনো ব্যারিকেড দেখা যায়নি। পুলিশ মানবঢাল বানিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনের দিকে যায়।
গুলিস্তান আন্ডারপাস এলাকায় এসময় জলকামান, রায়ট কার, প্রিজন ভ্যানসহ পুলিশের সতর্কাবস্থান দেখা যায়। পাশাপাশি পেছনের দিকে গোলাপশাহ মাজার এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল শোডাউন দেখা যায়।