৯৫০ টাকার আমটি ‘স্বপ্নে পাওয়া’, দেখতে জনতার ঢল

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের একটি ওয়াক্তিয়া মসজিদের উন্নতিকল্পে এক ইসলামি জলসার নিলামে ওঠা ৯৫০ টাকার অসময়ের আমটি দেখতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে। উচ্চমূল্যে নিলাম ও অসময়ের আম—এই দুই মিলে এলাকায় রটে যাচ্ছে নানান রটনা।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল পর্যন্ত তার বাড়িতে প্রায় হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) মধ্যরাতে তিনি আমটি ক্রয় করেন। তারপরের দিন অর্থাৎ বুধবার (১০ মার্চ) থেকেই হাজারো মানুষ আসতে থাকেন আমটির ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে।

আমটির ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক নামের ওই যুবক বলেন, ‘আমটি আমাদের বসন্তপুর এলাকার ফাতিমা বেগম (৩৯) নামের এক নারী স্বপ্নের মাধ্যমে পেয়েছেন। তিনি আমটি মসজিদে দান করেন। তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানতাম না। লোকমুখে শুনছি এসব ঘটনা। আমার উদ্দেশ্য ছিল আমটি বেশি দামে কিনলে মসজিদের উপকার হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বপ্নে দেখা অসময়ের আমটি নিয়ে বিপাকেও পড়েছি বেশ। এই আম দেখার জন্য আমার বাসায় দূর-দূরান্ত থেকে শতশত মানুষ আসছে। সাংবাদিক ও পরিচিতরা ফোন করে হয়রানি করছেন। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিক ও রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাও বৃহস্পতিবার আসতে চেয়েছেন আমার বাসায়। তাই আমটি আমি ফ্রিজে রেখে দিয়েছি।’

এ পর্যন্ত হাজারেরও অধিক মানুষ আমটি দেখার জন্য এসেছেন। এতে বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান থাকার পরও তাতে সময় দিতে পারেননি এই যুবক। সবাই এসে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

স্বপ্নে কীভাবে আমটি পেয়েছেন জানতে চাইলে ফাহিমা বেগম বলেন, ‘পরপর তিনদিন আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয় যে, আমার বাড়ির সামনের গোরস্থানে আমগাছের নিচে আম পড়ে আছে। স্বপ্ন দেখে তৃতীয় দিনের পর সেখানে যাই, একটি পড়ে থাকা আমও দেখতে পাই সেখানে। স্বপ্নের সাথে মিলে যাওয়ায় ভয় হচ্ছিল আমটি নিতে। ভয়ের কারণে আমটি না নিয়ে একবার ফিরে চলে আসি। কিন্তু অদৃশ্য গায়েবি আওয়াজ আসে আমটি নেয়ার জন্য। গায়েবি আওয়াজের কারণে আমি সেখানে যেতে বাধ্য হই। খুব ভয়ে ভয়ে আমটি নিয়ে আসি এবং মসজিদে দান করে দেই।’

ফাহিমা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, ‘গোরস্থানের ওই জায়গায় কয়েকটি আমের গাছ রয়েছে। সেখানো প্রচুর আম ধরে। আমের মৌসুমে গতবছর ওই গাছের আম খেয়ে দেখেছি। সেগুলোর স্বাদ সামান্য টক। কোন জাতের আম সেটা জানা নেই। তবে এই অসময়ে ওই গাছে কোনো আম ধরেনি, এটা নিশ্চিত। তবে মায়ের মুখে শুনেছি, তিনি স্বপ্নে দেখে ওই গাছের নিচে আম পেয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিএমএম বারি ডলার বলেন, ‘সবেমাত্র গাছে মুকুল ফুটেছে। আর সেই রকম কোনো আম এই অসময়ে বাংলাদেশে হয় না বা সেই রকম ব্যতিক্রম জাতের আমগাছ বাংলাদেশে নেই। ওই অসময়ের আমটি হয়তো বা বাইরের কোনো দেশের হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে শুনেছিলাম আমটি রঙিন বর্ণের কিন্তু পরে জানতে পারলাম সেটি হলুদ বর্ণের আম। রঙিন আম শুনে ধারণা করেছিলাম, আমটি হয়তো সদ্য নিবন্ধন পাওয়া ‘বারি-১৪’ জাতের। কিন্তু তা সম্ভব নয়, কারণ এটি এই অসময়ে হয় না। পরে জানলাম এটি হলুদ বর্ণের।’

বিস্ময়ের স্বরে এই বিজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন ‘এই অসময়ে কোনো আম দেশে পাওয়া যাচ্ছে—এটাই রহস্য ও বিস্ময়কর বিষয়। আবার স্থানীয়রা বলছেন, আমটি অলৌকিকভাবে পাওয়া। তাই ওই আমটির বিষয়ে জানার পর পরিচিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমটি সরেজমিনে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রয়োজন। কৌতূহল ও গবেষণা দুটোই হবে।’

উল্লেখ্য, জলসার রাতে একটি সোনার নাকফুলের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা ওঠে। সেখানে ওই আমটির মূল্যই উঠেছিল ৯৫০ টাকা।

 

Comments (0)
Add Comment