মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানানো হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব সূত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে আটজনের লাশ পাওয়া গেছে, পাঁচজন ফিরে এসেছেন আর সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে র্যাবের ক্রসফায়ারে ৫০ জন, পুলিশের ক্রসফায়ারে ৭০ জন, র্যাব ও বিজিবির ক্রসফায়ারে একজন, র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে একজন, বিজিবির ক্রসফায়ারে একজন, আনসারের ক্রসফায়ারে একজন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্রসফায়ারে ১৪ জন, যৌথ বাহিনীর ক্রসফায়ারে দুজন ও সেনাবাহিনীর ক্রসফায়ারে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমার জানা মতে, কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি।’ আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা প্রতিবেদনের বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
পুলিশের নির্যাতনে সাতজন, গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে একজন, র্যাবের নির্যাতনে দুজন ও বিজিবির নির্যাতনে একজন মারা গেছেন। পুলিশের গুলিতে ২৫ জন, গোয়েন্দা পুলিশের গুলিতে একজন বিজিবির গুলিতে দুজন মারা গেছেন। এ ছাড়া থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন, পুলিশ হেফাজতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দুজন এবং র্যাব হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর কারা হেফাজতে ৬৯ জন ও গণপিটুনিতে ১৩৫ জন মারা গেছেন।
রাজনৈতিক সংঘাত: এ বছর সারা দেশে ৮৬৫টি রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন ১৫৩ জন আর আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩১৮ জন।
সাংবাদিক হয়রানি: ২০১৫ সালে সারা দেশে ২৪৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। এর মধ্যে সন্ত্রাসীর হাতে খুন হয়েছেন দুজন। প্রকাশিত সংবাদের জন্য মামলার শিকার হয়েছেন ১০ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতন, হুমকি, হয়রানি বা মামলার শিকার হয়েছেন ১৮ জন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাতে হামলা/হুমকি/নির্যাতন/হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৪ জন, আর বিএনপির হাতে দুজন। সিটি ও পৌর নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ভীতি, হামলা ও বাধার শিকার হয়েছেন ৩৬ জন। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ২২ জন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: এ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০৪টি বাসস্থান ও ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ২১৩টি প্রতিমা, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৬০ জন আহত হয়েছেন।
সীমান্ত সংঘাত: ২০১৫ সালে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩২ জন, নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।