বেনাপোল কাষ্টমসে ছয় মাসে ২ শ’ ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি

কামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ’১১ কোটি ২৯ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫ শ’২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ২ শ’ ৯১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগস্টে ২৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, আহরণ ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ২৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৩২ কোটি ২১ লাখ টাকা। নভেম্বরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৭ কোটি ৭৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গিয়ে আমদানি করা সব পণ্যের শুল্কমূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে।পাশাপাশি নানামুখী হয়রানির ফলে আমদানিকারকরা ব্যবসায়িক সুবিধার্থে বেনাপোল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মংলা, হিলি,সোনামসজিদ বুড়িমারি ও ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন।ফলে বেনাপোল কাস্টমসে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।

জানা গেছে,বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন ৫শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে সে আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ছয় মাসে আনুমানিক ১০ হাজার টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে বলে কাস্টম সূত্রে জানা গেছে।বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, কাস্টম কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫শ’ ট্রাক পণ্য পরিবহন করতাম। এখন তা কমে এসেছে ১শ’ ট্রাকে। কাজ না থাকায় অফিসের স্টাফরা এখান থেকে চলে যাচ্ছেন।

যশোরের আমদানিকারক আল আমিন এন্টার প্রাইজের মালিক মিজানুর রহমান জানান, আগে দু’একদিনেই বেনাপোল দিয়ে সব ধরনের পণ্য ছাড় নেয়া যেতএখন সময় লাগে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ দিন। কাস্টমসের হয়রানির কারণে শুল্ক বেড়ে গেছে তিনগুন। ডিউটি দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে আমদানীকারকদের।অন্যদিকে, একই বাজারে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা পণ্য কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এখন বেনাপোলের পরিবর্তে অন্য স্থলবন্দর ব্যবহার করছি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর ধ্বংস করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে রয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছামতো এইচএস কোড পরিবর্তন করছেন। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে তার উপর জরিমানা আদায় করছেন। এসব কারণে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ঈদ, পূজাঁসহ বিভিন্ন বন্ধের কারণে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম হয়েছে। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী পণ্য এনে বিক্রি করতে না পারায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।ঘাটতি পূরণে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।আশা করছি, পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

Comments (0)
Add Comment