মাদ্রাসা ছাত্র নিহতের ঘটনায় বুধবার সারাদেশে হরতালের ডাক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে মাদ্রাসাছাত্রের নিহতের ঘটনায় আগামীকাল বুধবার সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে মাওলানা মোবারক উল্লাহ এ হরতালের ঘোষণা দেন।

মাওলানা মোবারক উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসাছাত্র নিহত ও মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকূল চন্দ্র বিশ্বাসের অপসারণ ও নিহত মাদ্রাসাছাত্রের নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা তৌহিদী জনতার ব্যানারে হরতাল পালিত হবে। এর আগে মঙ্গলবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)।

হাফেজ মাসুদুর রহমান শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে। তিনি শহরে থেকেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তার লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের ভাই হাফেজ মোহাম্মদ মামুন ও সহপাঠী মুফতি নিয়ামুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, মাসুদের গায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাফেজ মাসুদুর রহমানের মৃত্যুর পরপরই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এ সময় তারা বেশ কিছু স্থানে ভাঙচুর করেন বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আখাউড়ায় আটকা পড়েছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস। আগুন দেয়া হয়েছে রেললাইনে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা সিলেটে পথে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন। শহরে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

গতকাল সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনির সঙ্গে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে এতে ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হোসেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকায় দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদ্রাসাছাত্রের সঙ্গে ব্যবসায়ীর বাকবিতণ্ডার পর কয়েকশ ছাত্র জেলা পরিষদ মার্কেটে গিয়ে রনির মালিকানাধীন বিজয় টেলিকমসহ একাধিক দোকানে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। এর পর ব্যবসায়ীরা মাদ্রাসাছাত্রদের ধাওয়া করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিলে সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করে। অন্যদিকে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেয় কান্দিপাড়া এলাকাবাসী।

সংঘর্ষের সময় শহরের টিএ রোড ও বড় মাদ্রাসার সামনে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। মাদ্রাসার সামনে কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment