Connecting You with the Truth

আমদানী-রপ্তানী গতিশীল করতে আধুনিক চেকপোষ্ট হচ্ছে হরিদাসপুর বন্দরে

benapole-petrapole--er expot-import get pictureকামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানী বানিজ্যে গতিশীলতা আনতে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ভারতের হরিদাসপুর বন্দরে।যশোরের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় এই আধুনিক চেকপোষ্ট তৈরির কাজ শেষের পথে।খুব শ্রীঘ্রই এ আধুনিক চেকপোষ্টটি দু-দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মহাদ্বয়গণ এই বন্দরের শুভ উদ্ধোধন করবেন।

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের যে কোন দিন এ আধুনিক চেকপোষ্টটি উদ্ধোধন করা হবে। ইতিমধ্যে বন্দরের নির্মান কাজ কেমন চলছে এবং কি পরিমান জাজ বাকি আছে, তা সরেজমিনে পেট্রাপোল বন্দর ঘুরে গেলেন ভারতীয় কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধি দল।এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভারতের ল্যান্ডপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ওয়াইএস সেরওয়াত, কেন্দ্রের বর্ডার ম্যানেজমেন্টের সম্পাদক অনুপ কুমার শ্রীবাস্ত।এ সময় বিএসএফ ও শুল্ক দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।শ্রীঘ্রই এর উদ্বোধন করতে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানান, ৪২ হেক্টর জমির উপর তৈরি আধুনিক এই চেকপোস্ট এলাকাটি প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা প্রায় দেড় ঘণ্টা এ সব এলাকা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, আর মাত্র দিনের মধ্যে আধুনিক এই চেকপেষ্টের সকল কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভারতের ল্যান্ডপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ওয়াইএস সেরওয়াত জানান,এ চেকপোস্ট চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে আরও গতি আসবে।ট্রাক টার্মিনাল,এসি ওয়ার হাউজ, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট জোনসহ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজ করার সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকছে বন্দরে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে পেট্রাপোল এলসি স্টেশন আন্তর্জাতিক বাজারে আধুনিক বন্দরের পরিচিতি পাবে।

আধুনিকায়নের ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে তেমনি আমদানিও বাড়বে কয়েকগুন বলে আশা করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।সেইসঙ্গে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাও নেবে ভারত সরকার।

এর পরেও বর্তমানে পেট্রাপোল বন্দরের যে পরিকাঠামো রয়েছে,তাতে বহু সমস্যা। পেট্রাপোল সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস কর্পোরেশনের যে গুদাম রয়েছে তাতে সব মিলিয়ে ৯শ’ টি ট্রাক দাঁড়াতে পারে। ট্রাক পরীক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।পণ্য-ভর্তি ট্রাকের মধ্যে পাচারের নানা উপকরণ চলে গেলেও তা বোঝার উপায় নেই।তা ছাড়া, একই এলাকা দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে মানুষ ও পণ্য নিয়ে ট্রাক যাতায়াত করে। ফলে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় সকলকে।

ওই সব অসুবিধা দূর করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যের কাজে গতি আনতে পেট্রাপোল বন্দরের পাশেই আধুনিক চেকপোস্ট’ তৈরির পরিকল্পনা করে কেন্দ্র।কয়েক বছর আগে ওই কাজের সূচনা করেছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি-চিদম্বরম।যদিও কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আগেই শেষ হয়ে গেছে।প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষে ৪২ একর জমিতে চেকপোস্টটি তৈরি করতে ১৭২ কোটি টাকা খরচ হবে। তবে খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। ভারতের ’রাইস’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বন্দরের কাজ করছে।

আধুনিক এ সু-সংহত চেকপোস্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল প্রশাসনিক ভবনসহ বিশ্রামাগার, চওড়া রাস্তা, আলো, আমদানি ও রফতানির ট্রাক রাখার গুদাম ঘর,পণ্য পরীক্ষার জন্য সিকিউরিটি চেকপোস্ট, পার্কিং,কোয়ারেন্টাইন ভবনসহ (পশু খাদ্য ও প্রাণী খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করার জায়গা) বেশির ভাগ কাজই শেষ হয়েছে।নরম ঘাস লাগানো হয়েছে। নানা রকমের ফুল গাছও পোঁতা হচ্ছে।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক সদস্য জানান, এ মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।

ভারতের শুল্ক দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে এক সঙ্গে দু’হাজার ট্রাক একসাথে দাঁড়াতে পারবে। এখন শুধু পণ্য আমদানি-রফতানির কাজই হবে। ভবিষ্যতে এখান দিয়ে যাত্রী যাতায়াতের কথা আছে।প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের দিকের লিঙ্ক রোডও ঘুরে দেখেন। বাণিজ্যে গতি আসার ব্যাপারে আশাবাদী ভারতের ব্যবসায়ীরাও।পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তা এস কে বোস জানান, পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি ও উভয় দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাও এই পরিকল্পনায় রয়েছে।

উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বাণিজ্যে বিরাজমান সকল সমস্যার সমাধান হবে দাবি করে ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান,রফতানি-আমদানি জোনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে পেট্রাপোলে। দু’বন্দরের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ থেকে এখন যেসব পণ্যবাহী ট্রাক রফতানি পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরে আসে প্রবেশের পর তাদের খোলা আকাশের নিচে দিনের পর দিন আটকা পড়ে থাকতে হয় সেটা আর থাকবে না। একই সঙ্গে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মালামালও চুরি হবে না। থাকবে না আর বন্দরের রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকের জট।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, পেট্রাপোল এলসি স্টেশনকে আধুনিক বন্দরে পরিণত করার জন্য আমরা চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন বৈঠকে দাবি জানিয়ে এসেছি। দীর্ঘদিন পর ভারত সরকার পেট্রাপোল স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে পেট্রাপোল এলসি স্টেশনকে বন্দরে রূপন্তরিত করার কাজ শেষের পথে। এর ফলে দু‘দেশের বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Comments
Loading...