নরসিংদীতে শহীদ আসাদ দিবস পালিত
ফাহিমা খানম, নরসিংদী: শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় পালিত হলো ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানের মহা নায়ক আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ৪৭তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ আসাদ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকালে আসাদের জন্মস্থান নরসিংদী জেলার শিবপুরের ধানুয়ায় তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া শহীদ আসাদের কর্মময়জীবন ও চিন্তা চেতনা বিষয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকারী শহীদ আসাদ কলেজ, শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ও শিবপুর আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজ।
কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সকালে শহীদ আসাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ৯০‘র গণ আন্দোলনের নেতা ও সাবেক এমপি খায়রুল কবীর খোকন, শিবপুরের স্বতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় ব্যক্তিগত সহকারী নাসির উদ্দিন সরকার, সরকারী শহীদ আসাদ কলেজের উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কলেজের শিক্ষক ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, নরসিংদী জেলা বিএনপির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হারিছ রিকাবদারের নেতৃত্বে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, শিবপুর মডেল আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার আ: মান্নান খানের নেতৃত্বে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, জেলা ওয়াকার্স পার্টি, সোমেন চন্দ পাঠাগার, শিবপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, আমাদের মাচাং ডটকম, নরসিংদী জেলা ছাত্রদল, রায়পুরা উপজেলা ছাত্রদল, মনোহরদী উপজেলা ছাত্রদল, শিবপুর উপজেলা ছাত্রদল।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় ৯০’র দশকের ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘শহীদ আসাদ বাংলাদেশের গর্ব, নরসিংদীবাসীর গর্ব, আসাদের মূল মন্ত্র “জনগণতন্ত্র” সেই চিন্তা চেতনা নিয়ে আসাদ কৃষক আন্দোলন শুরু করেন। আসাদ শহীদ হলেও আমরা আসাদকে ভুলতে পারিনি। আমরা যারা দেশের স্বার্থে রাজনীতি করি তারা আসাদকে ভুলে থাকতে পারবনা। তাই আমি মনে করি আসাদের চেতনা বাস্তবায়ন হলে দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
আসাদের নেতৃত্বে হাটে বাজারে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার বলেন, ‘৬৯ সালে শহীদ আসাদের নেতৃত্বে আমরা যে ক’জন হাটে বাজারে কৃষক আন্দোলন করেছিলাম তাতে পুলিশ আমাদের বাধা প্রদান করা সত্তে¡ও পিছপা হইনি। এই হাটে বাজারে আন্দোলন করতে গিয়ে হাতিরদিয়া বাজারে ছিদ্দিক মিয়া, হাতেম আলীসহ ৩ জন কৃষক মারা যান এবং পুলিশের গুলিতে আসাদের মাথা বিদীর্ণ হয়ে যায়।’
আসাদের অন্যতম সহযোদ্ধা ও শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিছ রিকাবদার আসাদ সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘৬৯ সালে আমি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত, তখন আমাদের নেতা আব্দুল মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে রাশেদ খান মেননের ছাত্র ইউনিয়নের সাথে রাজনীতি করতাম। আর সেই থেকে ভাসানীর অনুসারী হিসেবে গ্রামের কৃষকদের নিয়ে কৃষক সমিতি গঠন করি এবং হাটে বাজারে আন্দোলন শুরু করি। এভাবে যখন দেশে কৃষক আন্দোলন জোড়ধার হতে থাকে তখন স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার এই আন্দোলনের মূল নেতা আসাদকে মেরে ফেলার জন্য ফন্দি আঁটে। এরই অংশ হিসেবে ৬৯ সালের ২০ জানুয়ারী সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে যখন শহীদ আসাদের নেতৃত্বে মিছিল বের হয় তখন স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পুলিশ বাহিনীর সদস্য ডিএফপি বাহাউদ্দিন খুব কাছে থেকে আসাদের বুকে গুলি করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে।’ সোমেন চন্দ পাঠাগারের সভাপতি শহিদুল হক সুমন অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘শহীদ আসাদ যে মন্ত্র নিয়ে গণতন্ত্র পতিষ্ঠা করতে চেয়েচিলেন সেই গণতন্ত্র এখন আর নেই। আমরা শহীদ আসাদের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।’
উল্লেখ্য যে, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের মহা নায়ক শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানের রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দিবসটি নিয়ে কর্মসূচী গ্রহণ করলেও খোদ আসাদের পরিবার বা নিকট আত্মীয়রা কবরে পুষ্পস্তবক অপর্ণ বা কোন কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। এনিয়ে সচেতন মহলে বিভিন্ন সমালোচনা শোনা গেছে।