Connecting You with the Truth

৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ভবন ধসবে ৭২ হাজার

৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ভবন ধসবে ৭২ হাজারঅনলাইন ডেস্ক: টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি আমাদের ভূপৃষ্ঠ। যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।

গত বছরের এপ্রিলে নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল। এদিকে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে এবং তার কেন্দ্র ঢাকার চারপাশের এলাকা হলে রাজধানীর ৭২ হাজার ভবন পুরোপুরি ধসে পড়বে- এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷ তাদের মতে, এমন ঝঁকি থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি মেকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই দেশটির৷ শুক্রবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৪ জানুয়ারি ভোর রাতে রিখটার স্কেলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ৷ এ ঘটনায় শুধুমাত্র আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন৷ সাধারণ মানুষের আতঙ্ক এবং চিৎকারে সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর অবস্থার৷ তাদের কথা, এবারের ভূমিকম্পের মতো কম্পন তারা আগে কখনো দেখেননি৷ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে গিয়ে আহত হন শতাধিক৷ ঢাকায় ছয়টি ভবন হেলে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এছাড়া সারাদেশে ৫০টিরও বেশি ভবন হেলে পড়ে অথবা ফাটল ধরে বলে জানা যায়৷ ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প৷ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠায় ঘুম থেকে উঠেই ঘর ছাড়ার চেষ্টা করে অনেক মানুষ৷ এ সময় আতঙ্কে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ৩৫০ কি.মি. দূরে মনিপুর রাজ্য৷ কেন্দ্রে এর মাত্রা ছিল ৬.৭৷ ওই কেন্দ্রে নাকি ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা ছিল৷ আর সেটা যদি হতো, তাহলে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তো৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ১২টি ভূমিকম্প ফাটল আছে৷ এসব জায়গায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে৷ ঢাকার অদূরে মধুপুর ফাটল খুব বিপজ্জনক৷ প্রতি ১০০ বছর পর পর ফাটল থেকে বড় আকারের ভূমিকম্প হয়৷ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়েছে৷ তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা৷ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জানান, ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করা হয়৷ তাতে দেখা যায় যে, আগামীতে যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে তিন লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভবন তাৎক্ষণিকভাবে ধসে পড়বে৷ একেবারে অক্ষত থাকবে খুব কম সংখ্যক ভবন৷ এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ ঘটবে মানবিক বিপর্যয়ও৷ তিনি বলেন, এই দুর্যোগের জন্য আমাদের প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়৷ প্রথমত, ভূমিকম্পে যাঁরা গৃহহীন হবেন তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো খালি জায়গা নেই ঢাকায়৷ উদ্ধার কাজের জন্য দক্ষ জনবল এবং যন্ত্রপাতি নেই৷ নেই চিকিৎসা সুবিধাো৷ তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাও নেই৷ তাই ভূমিকম্পের সময় কী কী করণীয়– সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না৷ ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত৷ উচিত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা৷ এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷

Comments
Loading...