কাউনিয়ায় শিক্ষার্থীদের থু-থু খাওয়ানো শিক্ষকের শাস্তি শুধুই বদলী
মিজান,কাউনিয়া(রংপুর):
রংপুরের কাউনিয়ায় শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের একজনের থু-থু অন্যজনকে খাইয়ে শাস্তি দেয়া সেই শিক্ষক পুরুস্কার হিসেবে পেলেন লোক দেখানো বদলী। হারাগাছ চতুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন থেকে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা পড়া না পারলে তাদের থু-থু খাইয়ে শাস্তি দিয়ে আসছিলেন। তাকে বরখাস্ত না করে অন্যত্র বদলী করায় এটিকে পুরস্কার হিসেবেই মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
সরেজমিনে বিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে অবিভাবকগনের কাছ থেকে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারীর ইঞ্জিনিয়ারিং এ ওই শিক্ষকের যথাযোগ্য শাস্তি না দিয়ে শুধুমাত্র লোক দেখানো বদলী করা হয়েছে। এই শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকেই উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাটা পড়েছে। থু-থু খাওয়ানো সেই শিক্ষক জামাল উদ্দিনকে উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের আজম খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। এতো বড় অপরাধের শাস্তি হিসেবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। এ যেন শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ঘটনা।
জানা যায়, উপজেলার হারাগাছ চতুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল উদ্দিন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা পড়ায় না পারলে তাদেরকে অভিনব কায়দায় থু-থু খাইয়ে শাস্তি দিতেন। তার শাস্তির ধরণ ছিলো একজনের থু-থু অন্যজনকে জোর করে খাওয়ানো। দিনের পর দিন এরকম অমানবিক আচরণ বন্ধ না হওয়াতে এক সময় ফুঁসে উঠে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারীকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনামিকা ক্লাসে অংক করতে না পারায় অন্য শিক্ষার্থীর থু-থু খাইয়ে মানসিক ভাবে নির্যাতন করেন সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিন। এঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশু শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেয়। এরপর এলাকাবাসী মানববন্ধন করলে শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারীর টনক লড়ে। পরে তিনি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুন নবীকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার, অভিযুক্ত শিক্ষক জামাল উদ্দিনসহ এসএমসি কমিটির সদস্য ও অভিভাবক, ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থী এবং স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়াও উভয়ের বক্তব্য শুনেন। তার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
এদিকে ওই শিক্ষক সকলের সামনে তার দোষও স্বীকার করেন। তারপর সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রদান করেন। পরবর্তীতে শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারী কি যে রিপোর্ট জেলায় পাঠালেন যার শাস্তি হিসেবে শুধুমাত্র ওই শিক্ষকের অন্যত্র বদলীর আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জারি করেন।
এব্যাপারে বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রাথমিক ভাবে বদলি করা হয়েছে। পরবর্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। সেখানে সে দোষী প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে যেখানে বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে তার রিপোর্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দিয়েছেন। তারপরও কেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বরখাস্ত না করে শুধু বদলীর আদেশ দেয়া হলো তা নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় অভিভাবক দেলোয়ার হোসেন ও এনামুল হকসহ অনেকেই বলেন, এতো বড় অপরাধ করায় শুধু বদলী করা হয়েছে। এটি অভিভাবকরা মেনে নিতে পারছেন না। তারা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারীর রিপোর্টে ঘাপলা আছে বলে মনে করছেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্তসহ কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারীর সাথে ফোনে কথা বললে তিনি ওই শিক্ষক জামাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।