কাউনিয়ায় সাঁড়া ফেলেছে কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন
মিজান, কাউনিয়া প্রতিনিধি:
চলতি মৌসূমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে খুশি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কৃষককুল। কিন্তু তীব্র শ্রমিক সংকট, কর্তনে উচ্চ মূল্য ও বৈরি আবহাওয়ার আশংকা সবেমিলে পাকা সোনালী ধান ঘরে আনতে ভোগান্তিতে পড়েছে চাষীরা। এছাড়া তীব্র শ্রমিক সংকটে ব্যয় বাড়লেও ধান কাটামাড়াই নিয়ে নাকাল যখন কৃষক। ঠিক তখনি উপজেলায় ব্যাপক সাঁড়া ফেলেছে কৃষি বিভাগের মিনি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন (কাটা ও মাড়াই যন্ত্র)।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে বোরো ধান পাকলেও তথ্যমতে কাটা হয়েছে তিনের এক ভাগ। কৃষি বিভাগের খামার যান্ত্রীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প-২য় পর্যায় (২য় সংশোধিত) এর আওতায় ডিএই গ্রুপের অর্থায়নে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের হরিশ্বর গ্রামে আইএপিপি সমিতিকে একটি মিনি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার (ধান/গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা) সহ একটি রিপার (ধান/গম কাটা), একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার (ধানের চারা রোপন), একটি পাওয়ার টিলার চালিত সিডার (গম, ভুট্টা, ডাল, তৈল ও ধান বীজ বপন করা), একটি পাওয়ার থেরেসার (ধান/গম মাড়াই করা) যন্ত্র প্রদান করে। এতে ধান কাটামাড়াইয়ে ব্যস্ত উপজেলার কৃষকরা কৃষি বিভাগের খামার যান্ত্রীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ফসল কর্তনের সুযোগ পাওয়ায় বেজায় খুশি। ফলে সময়, শ্রমিক ও ব্যয় সাশ্রয়ে কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে সাঁড়া ফেলেছে চাষীদের মাঝে বলে দাবী কৃষি বিভাগের।
মিনি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিনসহ অন্যান্য সেট প্রাপ্ত আইএপিপি সমিতির সভাপতি নুর ইসলাম রাজু জানান, দিনে ৮ থেকে ১০ বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই করা যায় মেশিনটি দিয়ে। যেহেতু একসাথে অনেক সুবিধা- সময় ও ব্যয় দু’টোয় কম লাগে তাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, সমিতির সদস্যদের ভূর্তকি মূল্যে শস্য কর্তন ছাড়াও ভাড়ায় জমির স্তরভেদে বিঘাপ্রতি ১২শ থেকে ১৫শ টাকায় শস্য কর্তন করা হয়। রয়েছে কৃষি বিভাগ কর্তৃক প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক। মেশিন গুলো চালকসহ মাত্র দু’জন লোক দিয়ে পরিচালনা করা যায়। তিনি আরো বলেন, একদিকে সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি উপকৃর্ত হচ্ছে কৃষক আর অন্যদিকে কৃষিতে মিলছে উচ্চতর সম্ভাবনা।
উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের স্বাব্দী গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসূমে ১২ বিঘা জমিতে হাইব্রীড বোরো ধান আবাদ করেছি। ফলন ভালো হলেও জমি একটু নিচু হওয়ায় শ্রমিক সমস্যায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে ছিলাম। পরে ভাড়ায় মিনি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিনে ধান কাটামাড়াই করি। এতে অল্প সময়ে স্বল্প ব্যয়ে ধান ঘরে তুলতে পেরে আমি চিন্তা মুক্ত। অপরদিকে বালাপাড়া ইউনিয়নের গাজীরহাট এলাকার কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, আবাদেতো লাভ নাই তার উপর শ্রমিক সংকটে পাকা ধান নিয়ে কি যে সমস্যায় পড়েছি, মনেহয় কৃষি চাষাবাদ আর করা যাবেনা। তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ভাড়ায় মিনি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিনে ধান কাটামাড়াই করে আমি খুশি। তবে সুবিধা থাকলেও মেশিনটি উপজেলায় চাহিদার চেয়ে অপ্রতূল। তাই তিনি কৃষক ভোগান্তি রোধে সংশ্লিষ্টদের কাছে সরবরাহ বৃদ্ধির দাবী করেন।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল আলম বলেন, কৃষি বিভাগের খামার যান্ত্রীকরণ ও ফসল উৎপাদনে ভূর্তকি প্রদানের মাধ্যমে কেটে যাচ্ছে সংকট সমস্যা বাড়ছে অপার সম্ভাবনা। অর্ধেক ভূর্তকি মূল্যে ধান কাটামাড়াই মেশিন কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌছাতে ব্যয়, সময় ও শ্রমিক সংকট নিরসনে চলছে ব্যাপক উদ্যোগ। তিনি জানান, খামার যান্ত্রীকরণে সরকারী উদ্যোগ বাস্তবায়নে ভূর্তকি মূল্যে বীজ বোনা, চারা রোপন ও কাটামাড়াই মেশিন সংগ্রহে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, খামার যান্ত্রীকরনের ফলে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং উদ্বৃত্ত শস্য উৎপাদন ও ধান কাটামাড়াই সমস্যা লাঘবে আসবে কাংখিত সাফল্য ।