ঘোড়ার মাংস বিক্রির মামলায় আসামিদের অব্যহতি, এজাহারকারী ও তদন্তকারীকে তিরস্কার
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সানাউল্লাহ (৩২) ও হামিদুর রহমান (৩৩) নামে দুই ব্যক্তি প্রকাশ্যে বাজারে ঘোড়ার মাংস বিক্রির অপরাধে দায়ের করা মামলা থেকে আসামীদের অব্যহতি দিয়েছে আদালত। একই সাথে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করায় এজাহারকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক, মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলামকে তিরস্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বোদা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বোদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। পঞ্চগড় অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: মতিউর রহমান গত মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর ২০২০ সালে জেলার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের চৌধুরীহাটে বিকেলে জবাইকৃত ঘোড়ার মাথা, চামড়া ছিলানো চার টি পা, ঘোড়ার দেহ সর্বমোট ৩৫ কেজি ঘোড়ার মাংস জব্দ করে বোদা থানা পুলিশ। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রেখে জব্দকৃত মাংস মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সাথে আসামিদ্বয়কে আটক করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার শেষে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলাম আসামী সানাউল্লাহ এবং হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মতে বোদা থানার চুড়ান্ত রিপোর্ট নং-২৩, ২০/০৭/২০২০ ইং দাখিল করে। সেই পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিলের অনুমতি প্রার্থনা করেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে পুলিশের চুড়ান্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘোড়া জবেহ করে গোস্ত খাওয়ার অপরাধে এসআই লিপন কুমার বসাক আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) তৎসহ পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় মামলা দায়ের করে। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে বোদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এজাহারকারীর সাথে উপস্থিত হয়ে ঘোড়ার মাংস বিক্রির সময় ৩৫ কেজি ঘোড়ার গোস্ত জব্দ করে।
আদালতের রায়ে জানা যায়, মুসলিমদের হাদিস গ্রন্থ সহি বুখারীর (তাওহিদ প্রকাশনী) ৫৫১৯ ও ৫৫২০, মিশকাত শরীফের ৪১০৭ নং হাদীসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল মর্মে উল্লেখ আছে। মুসলিম হিসেবে হালাল প্রাণী জবেহ করা ও খাওয়া তাদের ধর্মীয় অধিকার। দেশের প্রচিলত আইনে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া নিষেধ মর্মে কোথাও উল্লেখ নেই। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বুখারি শরিফের ৫০০৯, ৫০১০ ও ৫০১৪ নং হাদিসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল ও বৈধ উল্লেখ আছে বলে দায়ের করা মামলা থেকে আসামিদের অব্যহতি দেন আদালত। আদালত রায়ে বলা হয়েছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুস সুবাহান জব্দকৃত ঘোড়ার গোস্ত কোনরূপ রাসায়নিক পরীক্ষ ছাড়াই গোড়ার গোস্তকে ক্ষতিকর মর্মে উল্লেখ করেছেন যা গ্রহনীয় নয়। উক্ত ঘোড়ার গোস্তের রসায়নিক পরীক্ষা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়িত্ব অবহেলা করেন। এ ঘটনায় কর্মকর্তাগণের খামখেয়ালিপনা ও ভুলের কারনে আসামিদ্বয় এ মামলায় ৭ দিন হাজতবাস করেছেন যা দুঃখজনক। ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া হালাল স্বত্ত্বেও বিনা অপরাধে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের করায় এসআই লিপন কুমার বসাক মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসমকে দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকার সতর্ক করে তিরস্কার করা হয়।
এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোদা উপজেলা সহাকারী কমিশনার ভূমি ও বোদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। একই সাথে আসামিদ্বয়কে অত্র মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়।