বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা: রাজনৈতিক দোষারোপে কার কী ফায়দা?
বাংলাদেশের ইতিহাসে গুলশান হামলার আগে কখনো জঙ্গি হামলায় একসাথে এতো বেশি মানুষ নিহত হয়নি।
বিবিসি বাংলার প্রতেবেদন
রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর কয়েকদিন না কাটতেই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরকে দোষারোপ করার পুরনো রীতি আবার শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিল গুলশানের হামলা। বাংলাদেশে এর আগে কখনো জঙ্গি হামলায় একসাথে এতো বেশি মানুষ নিহত হয়নি। যে বাংলাদেশকে এক সময় বিদেশী নাগরিকরা নিরাপদ বলে মনে করতেন, সেই বাংলাদেশকে এখন তারা অনিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মনে করছেন।
গুলশান হামলার ঘটনায় এ কথা পরিষ্কার যে বিদেশী নাগরিকরা ছিল জঙ্গি হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু এতকিছুর পরেও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সেই পুরনো রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বরাবরের মতো গুলশান এবং শোলাকিয়ার হামলার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা আবার বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোট শহীদ মিনারে যে সমাবেশ করেছে সেখানে অধিকাংশ বক্তার বক্তব্যই ছিল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে।
আওয়ামী লীগ নেতা নূহ উল আলম লেলিন বলছেন বিএনপি’র সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা হলেই যদি জঙ্গি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো বুঝতে হবে এসব কাজের পেছনে বিএনপি’র ইন্ধন ছিল।
বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব নেই বলে সরকার এতদিন জোর গলায় দাবি করলেও, গুলশান হামলার পর সেটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের অনেক সিনিয়র নেতা মনে করেন বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর যোগসাজশ আছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন এ বিষয়গুলোতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ক্রমাগত বক্তব্য দেবার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে সরকারের সুবিধা। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থানে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের উদ্বেগ খোলামেলাভাবে জানিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্ব দেখতে চাইছে এই সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার কতটা আন্তরিক।
সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকার এখনো পশ্চিমাদের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশের জঙ্গি সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘‘রাজনৈতিক সমঝোতা’’, ‘‘জনগণের ঐক্য’’ এবং ‘‘জাতীয় ঐক্য’’– এসব কথা বললেও এর মাধ্যমে ঠিক কী অর্জিত হবে সেটি তারা পরিষ্কারভাবে বলছেন না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন এখন পর্যন্ত সরকারের ভূমিকা হলো যে তারা এর থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।
বিএনপি’র অনেক নেতাই মনে করেন, বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম বন্ধ হোক সেটা সরকার চায় না। কারণ, তাদের বক্তব্য এর মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। তারা বলছেন জঙ্গিবাদ ইস্যুকে জিইয়ে রেখে সরকার নির্বাচন ইস্যু থেকে দেশী-বিদেশী মহলকে দূরে রাখতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “এখন পর্যন্ত তাদের (সরকারের ) যে ভূমিকা, সেটা হলো যে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।”
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে সেটি এখনো পশ্চিমাদের কাছে অস্পষ্ট বলে অনেকেই মনে করেন।
এদের কারো কারো ধারনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিঁকে থাকার জন্য প্রধান প্রতিপক্ষ হচ্ছে বিএনপি, জঙ্গিরা নয়। সুতরাং জঙ্গি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে দোষারোপ করতে পারলে সরকারেরই লাভ। কারণ অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি আছে বলে মনে করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন জঙ্গি ইস্যু নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পরস্পরকে কে কতটা বিপদে ফেলতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন জঙ্গি ইস্যু নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পরস্পরকে কে কতটা বিপদে ফেলতে পারে – সেই প্রতিযোগিতা চলছে। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য দরকার। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল সেটি মোটেও মনে করেনা।
আওয়ামী লীগ নেতা নূহ উল আলম লেলিন বলছেন বিএনপি’র সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা হলেই যদি জঙ্গি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো বুঝতে হবে এসব কাজের পেছনে বিএনপি’র ইন্ধন ছিল। গুলশান হামলার ঘটনা সরকারের জন্য যে যথেষ্ট বিব্রতকর সেটা পরিষ্কার। এ ঘটনায় বিরোধী বিএনপি যে রাজনৈতিকভাবে খানিকটা সুবিধা পাচ্ছে সে কথাও পুরোপুরি অস্বীকার করা যাবে না। সে কারণেই জঙ্গি ইস্যু বারবারই রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যেই আটকে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।