প্রক্সি যুদ্ধে আঙ্কারা-মস্কো, পূর্ণ যুদ্ধের আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বর্তমানে সিরিয়ায় তুরস্ক ও রাশিয়া প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। আসাদ সরকার বিরোধী বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে আঙ্কারা এবং সরকারি বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদ দাতা মস্কো। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের তীব্র বাকযুদ্ধ যে কোনো সময় তুর্কি-রুশ যুদ্ধে রূপান্তর হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
সিরিয়া যুদ্ধের দুই প্রধান খেলোয়াড়ের মধ্যে ঐতিহাসিক শত্রুতা রয়েছে। ষোড়শ শতকে প্রথম রুশ-তুর্কি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং সর্বশেষ ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমর্থন নিয়ে ঐতিহ্যবাহী অটোমান সাম্রাজ্য ক্রিমিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার মুখোমুখি হয়।
৫ বছরের বেশি সময়ব্যাপী চলমান সিরীয় যুদ্ধে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া যোগদান করলে এবং কুর্দিদের লক্ষ্য করে তুর্কি বাহিনী হামলা চালানো শুরু করলে যুদ্ধ পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। নতুন করে এই অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে।
এই সংঘর্ষ শুধু আকাশেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বিদ্রোহীদেরকে তুর্কি সহায়তা ও সরকারি বাহিনীকে রাশিয়ার সমর্থন সিরিয়ার স্থল যুদ্ধকেও তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলেছে। রাশিয়া তুরস্কের প্রধান শত্রু কুর্দিদেরও সমর্থন করছে।
বর্তমানে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বাকযুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকলেও যে কোনো সময় এই দ্বন্দ্ব প্রাণঘাতী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ সপ্তাহে রুশ বিমান হামলার কড়া সমালোচনা করে আঙ্কারা বলেছে, এই হামলা ‘নীচ, নির্মম ও বর্বর’ এবং এর ‘সমুচিত জবাব’ মস্কোকে দেয়া হবে।
অন্যদিকে, উত্তর আলেপ্পোতে কুর্দি অবস্থানে তুর্কি বিমান হামলার সমালোচনা করে রাশিয়া এ হামলাকে ‘উস্কানিমূলক’ বলেছে এবং মঙ্গলবার রুশ সরকারি দপ্তর থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে তুরস্ক।
সম্প্রতি তুরস্ক ঘোষণা দিয়েছে, সিরিয়ায় আইএসকে মোকাবেলায় সৌদির সাথে সাথে তুরস্কও স্থল বাহিনী পাঠাতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তুর্কিদের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে রুশ বাহিনী।
সিরিয়ায় আসাদের অবস্থানের পাশাপাশি কুর্দি সমস্যাও রুশ-তুর্কি সমস্যা সমাধানের পথে অন্যতম প্রধান বাধা।
ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম তীর থেকে তুর্কি সীমান্ত পর্যন্ত সিরিয়ার একটি বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল গঠনকারী কুর্দিদের প্রতিহত করতে চায় তুরস্ক। কিন্তু কুর্দিদের সহায়তা করছে রাশিয়া। রুশ সমর্থনে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে কুর্দিরা। আর এতে তুরস্কের সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে রুশদের ওপর।
তুরস্কের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ঝুঁকি নিয়ে মঙ্গলবার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক গভীর সমস্যায় পতিত হয়েছে’।
গতবছরের নভেম্বরে রুশ বোমারু বিমান তুর্কি সীমান্তে ঢুকে পড়লে তুর্কি এফ-১৬ জেট বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে বিমানটিকে। এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে রাশিয়া। দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে এবং পরিস্থতি ক্রমেই আরো জটিল হয়ে যায়।
আলেক্সান্ডার গোল্টস নামের এক সামরিক বিশেষজ্ঞ জানান, তুরস্ক স্থল হামলা শুরু করলে রুশ বাহিনীর সাথে তাদের যুদ্ধ অনিবার্য। কেননা, রাশিয়াও তখন সিরিয়ায় স্থল বাহিনী পাঠাতে বিলম্ব করবে না।
এই উত্তেজনার রেশ ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসকেও ছুঁয়ে গেছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ভূমিতে রুশ হামলা হলে তাদেরকে রক্ষায় নীতিগতভাবে ন্যাটোকে এ যুদ্ধে শরিক হতে হবে।
রাশিয়ার একজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নিকোলাই বরডিউজা বলেন, ‘ সিরিয়া পরিস্থিত সম্পূর্ণ নতুন একটি রূপ ধারণ করতে পারে। বিশ্ব পরাশক্তিরা জড়িয়ে পড়তে পারে একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী যুদ্ধে। শুরু হতে পারে বিশ্বযুদ্ধ।’ সূত্র: এএফপি।