Connecting You with the Truth

ফেসবুক গ্রুপে দীক্ষা নিয়ে কথিত হিজরতে বেরিয়েছিলেন তারা

প্রথম আলো:
‘দুনিয়া কিয়ে মুসাফির’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়েছিলেন ৯ তরুণ-তরুণী। তাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই গ্রুপে ধর্মীয় দীক্ষার নামে তাঁদের উগ্রবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের যুক্ত করা হয় অনলাইন যোগাযোগের আরেক মাধ্যম টেলিগ্রামের একটি গ্রুপে। সেখানেও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের জন্য পাহাড়ি এলাকার নিরিবিলি পরিবেশে যাওয়ার কথা বলা হয়।

কথিত ধর্মগুরুদের প্ররোচনায় হিজরতের নামে ঘর ছাড়েন এই তরুণ-তরুণীরা। একপর্যায়ে রাঙামাটি পৌঁছেও গিয়েছিলেন। সেখানে প্রত্যাশামতো পরিবেশ না পেয়ে ফিরে এসেছিলেন চট্টগ্রামে। সেখান এক তরুণী অসুস্থ হলে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে তাঁদের খবর পেয়ে নয়জনকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র‌্যাব। ওই ৯ তরুণ-তরুণীকে আজ সোমবার দুপুরে র‌্যাব সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই তরুণ-তরুণীরা বলেছেন, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁরা উগ্রবাদের পথ ছেড়েছেন।

‘নবদিগন্তের পথে’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন ৯ তরুণ-তরুণীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও বই উপহার দেন। পাশাপাশি তাঁদের নগদ অর্থসহায়তা দেন তিনি। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উগ্রবাদের পথে পা বাড়াচ্ছেন। সন্তানেরা যেন ভুল পথে পা না বাড়ান, সে জন্য সমাজের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং মা–বাবাকে সন্তানের প্রতি যত্নবান হতে হবে। শুধু উগ্রবাদ নয়, মাদকের পথে যেন সন্তানেরা পা না দেন, সে জন্যও সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া ৯ তরুণ-তরুণীর বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। তাঁরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, এসব তরুণ-তরুণী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের নামে একযোগে ঘর ছেড়েছিলেন গত ২২ ডিসেম্বর। এর তিন দিন পর ২৫ ডিসেম্বর তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাঁদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ‘কাউন্সেলিং’ করা হয়। ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ইমতিয়াজ হোসেন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মশিউর রহমান।

ফাঁদে পড়েছিলেন তাঁরা-
পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া ৯ তরুণ-তরুণীর নামও প্রকাশ করেছে র‌্যাব। তাঁরা হলেন আবু বকর সিদ্দিক, ফয়সাল হোসেন, ফারুক হোসেন, আলিফ খান, মুফলিয়া আক্তার, তাজকিয়া তাবাসসুম, জান্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আক্তার ও কানিজ ফাতিমা ইফতি।

অনুষ্ঠানে ফারুক হোসেন ও তাজকিয়া তাবাসসুম তাঁদের ফিরে আসার গল্প বলেছেন। তাঁরা দুজনই বলেছেন, ফেসবুকে একটি গ্রুপে যুক্ত হয়ে তাঁরা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। যাদের মাধ্যমে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, তাদের তাঁরা চিনতেন না। অচেনা ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যার ফাঁদে পড়ে তাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন।

ফারুক ও তাজকিয়া আরও জানান, গ্রুপের আলোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়জনই কথিত হিজরতের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তখন তাঁরা গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ করে রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ২২ ডিসেম্বর ঘর ছাড়েন। পরদিন ২৩ ডিসেম্বর তাঁরা চট্টগ্রামের একটি স্থানে একত্র হন। সেখান থেকে বাসে করে রাঙামাটি যান। সেখানে গিয়ে নিরিবিলি পরিবেশ না পেয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। নিরিবিলি পরিবেশ না পেয়ে তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে একজন নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। ২৫ ডিসেম্বর র‌্যাব গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

৯ তরুণ-তরুণীর মধ্যে ১ জন দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে। ওই চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে বলেন, তাঁর ছেলে মুঠোফোনে বিভিন্ন মেগা সিরিয়াল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন। তাই সন্তানেরা মুঠোফোনে কী করছেন, এর খোঁজ রাখার পরামর্শ দেন তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখার কথা বলেন তিনি।

ঘর ছাড়া ৯ তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানে তাঁদের অভিভাবকেরা কথা বলেছেন। আজ সোমবার উত্তরায় র‌্যাব সদর দপ্তরে

অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা নয়-
‘নবদিগন্তের পথে’ অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক ছিলেন ঢাকার উত্তরার জামিয়া আরাবিয়া বায়তুসসালাম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মুফতি মানসুর আহমাদ। কোনো অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে ইসলামের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মুফতি মানসুর আহমাদ বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ইসলামের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন কি না, সেটা জানার কোনো উপায় নেই। তিনি খণ্ডিত ব্যাখ্যা দিতে পারেন। যদি খণ্ডিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাহলেই ভুল পথে পা বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলে কেউ ভুল পথে পা বাড়াবে না। এ কারণেই যাঁর সম্পর্কে জানি, তাঁর কাছ থেকেই ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা নেওয়া প্রয়োজন। যিনি প্রকাশ্যে ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারেন, তাঁদের কাছ থেকেই ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

-প্রথম আলো

Comments
Loading...