ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরে প্রলয়ঙ্করী বন্যা
ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
প্রলয়ঙ্করী বন্যায় হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে বলে সোমবার জানিয়েছে এনডিটিভি।
রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর শহরের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উদ্ধারের অপেক্ষায় এসব এলাকার লোকজন বাড়ির বারান্দায় ও ছাদে অপেক্ষা করে আছে।
প্রবল বন্যায় ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে অনেক মানুষ নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন।
পার্শ্ববর্তী ঝিলম নদীর উপচে পড়া পানি শ্রীনগরকে একটি বড় ধরনের হ্রদের রূপ দিয়েছে। বন্যার পানি ক্রমাগত বাড়ছে এবং রাজ বাগের মতো কোনো কোনো এলাকায় দুই-তিনতলা পর্যন্ত উচ্চতা ছাড়িয়ে গেছে।
বাড়তে থাকা বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে লোকজন হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। শ্রীনগরে সামরিক বাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট, বেসামরিক প্রশাসনের সচিবালয় এবং উচ্চ আদালতের ভবনও পানিতে ডুবে গেছে।
প্রবল পানির তোড়ে রাস্তা ও সেতু বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে যাওয়ায় দক্ষিণ ও মধ্য কাশ্মিরের পুলবামা, অন্ততনাগ ও শোপিয়ান এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। অনেক মানুষ এখন ত্রাণশিবির ও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছেন।
রাজধানী শ্রীনগরসহ রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায়ই বিদ্যুৎ নেই। টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।
লোকজন অভিযোগ করেছে, রোববার রাত থেকে তারা বন্যায় আটকে পড়া পরিবারের লোকজনের কোনো খবর নিতে পারছেন না।
হেল্পলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলো থেকে পাঠানো জরুরী বার্তার প্লাবন দেখা দিয়েছে।
পাঁচ দিনের প্রবল বর্ষণে রাজ্যের প্রধান নদী ও ঝর্ণাগুলো উপচে রাজ্যজুড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার বৃষ্টি কমার পর উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জানিয়েছেন, ভূমি উচ্চতা উদ্ধার অভিযানকে কঠিন করে তুলেছে।
উদ্ধার তৎপরতার জন্য সেনাবাহিনী ১৮ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য নিয়োগ করেছে, অপরদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনী ২৯টি বিমান ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।
এসব বাহিনী রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে। দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) জানিয়েছে, তারা প্রায় চার হাজার দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করেছেন।
জম্মু জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে সড়ক, বহু সেতু, ভবন ও জমির ফসল ধ্বংস হয়েছে। জম্মু-পাঠানকোট মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হজ্জ্বের সব ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়েছে।
রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিমানযোগে রাজ্যের বন্যা দুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতিকে “জাতীয় দুর্যোগ পর্যায়ের” বলে বর্ণনা করেছেন।
রাজ্যটির জন্য কেন্দ্রিয় সরকারের তরফ থেকে এক হাজার কোটি রুপি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।