মহাদেবপুরে বৃদ্ধার শিকল বন্ধি জীবন-যাপন!
ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ: ছয় সন্তানের জননী আদিবাসী সুরবালা রানী পাহান (৬৭) বড় কোন অন্যায় করেননি। তিনি কোন সন্ত্রসী নন, কোন হত্যা মামলার দাগি আসামি নন, কোন চুরি বা ছিনতায়ের ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত নন। তবুও তিন বছর ধরে বন্ধী জীবন যাপন করছেন। কারন,পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অপরাধ তিনি মানসির প্রতিবন্ধী। পরিবারের সদস্যরাই এভাবে বেধে রেখেছেন তাকে। আর যে কোন উপায় তারা পাচ্ছেনা। বাধ্য হয়েই বেধে রাখতে হচ্ছে। যেহেতু মানসিক ভারমাম্য নেই, তাই ছেরে দিলে নিখোঁজ হওয়াসহ নানা সমস্যার করনে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। মা যেন হারিয়ে যেতে না পারে এজন্য মায়ের পায়ে শিকল লাগিয়ে রেখেছেন সন্তানরা। অমানবিক ঘটনাটি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের বড় মহেষপুর গ্রামের। স্থানীয়রা জানান, বড় মহেষপুর গ্রামের মৃত কালু পাহানের স্ত্রী সুরবালা রানী পাহান তিন বছর পূর্বে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজের ৫-৬ দিন পর পরিবারে সদস্যরা অনেক খোজা-খুজি করে বাড়িতে এনে পায়ে শিকল লাগিয়ে রাখেন। সুরবালা রানীর বড় মেয়ে জিরো পাহান বলেন, আমার মা বছর তিনেক আগে হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক খোজা-খুজির ৬ দিন পর মাকে আমরা পেয়েছি। ঐ সময় মা উল্টা-পাল্টা কথা-বার্তা বলছিল, এজন্য মাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মায়ের ব্রেনের সমস্যা বলে জানান চিকিৎসক। মাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তখন থেকেই মায়ের পায়ে শিকল লাগিয়ে রোখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আমরা গরীব পাহান মানুষ, পরের বাড়িতে কাজ করে কোন মতে সংসার চালায়। একদিন কাজ না করলে পেটের ভাত হয়না, চিকিৎসার টাকা কোথাই পাব? স্থানীয় ইউপি সদস্য কে মায়ের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার জন্য আমরা বারবার বল্লেও তারা আমার মায়ের বয়স নাকি হয়নি এজন্য কার্ড করে দেননি। বয়স্ক ভাতার টাকা পেলে সেই টাকায় মায়ের চিকিৎসা করাতাম বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র শিকল বন্ধি বৃদ্ধার জীবন-যাপনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ব্রেনের সমস্যার কারনে ঐ বৃদ্ধাকে তার ছেলে-মেয়েরা শিকল বন্ধি করে রেখেছে বলে আমি শুনেছি। তার নামে আগামী লিষ্টে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।#