রৌমারীর চরাঞ্চলে অভিনব কায়দায় ভূমি দখল; অতিষ্ঠ চরাঞ্চলবাসী
রৌমারী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলায় এক ভূমিদস্যুর অভিনব কায়দায় ভূমিদখলে অতিষ্ঠ চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকরা। উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা গ্রামের দক্ষিণ ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম খাঁ ও তার পাঁচ ভাই জাহেদুল ইসলাম খাঁ ওরফে ফাজেল, সাদেকুল ইসলাম খাঁ ওরফে নোয়াই, জোহুর উদ্দিন খাঁ, আমির হোসেন খাঁ, জাহাঙ্গীর আলম খাঁ গংদের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ ওই গ্রামের কৃষকদের।
কাজাইকাটা গ্রামের কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা গ্রামের মোতালেব খাঁ’র ছেলে নুর ইসলাম খাঁসহ ৬ ভাই মিলে দীর্ঘদিন যাবত চরাঞ্চলের কৃষিদের জমি অভিনব কাদায় দখল করে আসছে। ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় গরিব মানুষের জমিজমা দখল করে নিলেও ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ হয় না।
ওই গ্রামের ইব্রাহিম মণ্ডলের ছেলে ইসমাইল হোসেন জানান, ৮১৬, ৪০২, ৩৭০০, ৩০২৯ খতিয়ান নংয়ের ৫৭শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি জমি আমার বাপ-দাদার আমল থেকে কৃষি ফসল চাষ করে খাই। অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) কেস নং ৫৭/২০০০, ৫৮/২০০০ বাংলা ১৩৯৭ থেকে ১৪২৩ সাল পর্যন্ত দখলভিত্তিক লিজমানি দিয়ে আসছি। হঠাৎ করে কয়দিন আগে আমার রোপনকৃত ইরি ক্ষেতে নুর ইসলাম মাস্টার ও তার লোকজন ঘর তুলে জমি দখল করে নেয়।
তিনি আরও জানান, তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায়না। তারা ছয় ভাই মিলে স্থানীয় প্রভাবে চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষদের আবাদি অপিত সম্পতি (ভিপি) প্রায় বিশ একর জমি দখল করে নিয়েছে।
কাজাইকাটা গ্রামের আনছের আলীর ছেলে জুরান আলী বলেন, ‘‘আমাগো দাগের বেবাগ গরিব মানুষের দখলীয় জমি নুর ইসলাম মাস্টার ও তার ভাইরা বেখল কইরা নিছে। এহন আমরা কোহানে যায়া বিচার দিমু, কেউ আমাগো বিচার করে না।’’
একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক, বক্তার হোসেন, জসিমউদ্দিন, লালবাদশা, ছানোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দক্ষিণ ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম মাস্টারারা ৬ ভাই কাজাইকাটা এলাকার সব অর্পিত সম্পত্তি(ভিপি) দখল করে খায়। ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ হয় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, ‘‘থানায় সালিশি বৈঠকে নুর ইসলামগংদের দখলকৃত জমি প্রকৃত মালিক ইসমাইল হোসেনকে ছেড়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি থানার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসমাইলকে জমি হস্তান্তর করে দিয়েছি। পরে রাতে ওরা জোর করে জমি দখল করে নিয়েছে। আমার করার কি আছে? শক্তি জোড়ে তারা মানুষের জমি দখল করে।’’
অভিযুক্ত নুর ইসলাম কাছে ভূমি দখল এবং জমির দলিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এক নম্বর খতিয়ানের জমি যে দখল করে খাবে সে মালিক, তারা সাতান্ন বছর খাইছে এখন আমরা খামু। কাজাইকাটা এলাকার অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) সব জমি আমার বাবার নামে লিজ করা। আমরা খামু না, অন্য মানুষে খাবে? কাগজ আদালতে জমা দিমু, মানুষকে দেখাবো কেন?’’
চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক মন্ডল বলেন, আমি ছোট থেকে দেখি ইব্রাহিম মন্ডল ওই জমি চাষাবাদ করে খায়। হঠাৎ করে নুর ইসলাম মাস্টারা কয় ভাই মিলে জোরপূর্বক ওই জমির উপর ঘর তুলে জমি দখল করে নেয়।
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম সাজেদুল ইসলাম বলেন, নুর ইসলামগংদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করলে শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় লোকজন থানায় বসে দু’পক্ষের কাগজপত্র দেখে যেহেতু নুর ইসলামগংদের কোন কাগজ নাই, তাই ইসমাইল হোসেনকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তারা জমি ছেড়ে না দিলে আমার করা কি আছে, বিষয়টি আদালত দেখবে।