শরিয়াহ ও মা’রেফাত
ইসলামে মানুষের আত্মার উন্নতির যে অংশটুকু আছে তাকে যদি মা’রেফাত বলে ধরে নেওয়া যায় তবে এই দীন হলো শরিয়াহ ও মা’রেফাতের মিশ্রণে একটি পূর্ণ ব্যবস্থা।
.
মানুষ এক পায়ে হাটতে পারে না, তাকে দু’পায়ে ভারসাম্য করতে হয়। দীনেরও দু’টি পা। এক পা শরিয়াহ অন্য পা মারেফাত। এই দুই পায়ের সহযোগিতায় একটা মানুষ ভারসাম্য রেখে হাটতে পারে। একটা জাতির বেলায়ও তাই। ঐ দুই পায়ের একটা বাদ দিলে বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে ঐ জাতিও আর হাটতে পারবে না, তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারবে না।
.
ইসলামের ইতিহাসে আমরা পাই, একটি পর্যায়ে সুফী-সাধকরা এই দীনের শরীয়াহকে ছেড়ে মারেফাতের পা’টাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। অবশ্য শরিয়াহর পায়ের যেটুকু ব্যক্তিগত পর্য্যায়ের সেটুকু আংশিকভাবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এ দীনের শরিয়াহ প্রধানতই জাতীয়; রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও দণ্ডবিধিই এর প্রধান ভাগ। এই প্রধান অংশটুকুকে বাদ দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত শরিয়াহ ও আত্মার উন্নতির অংশটুকু গ্রহণ করে নির্জনবাসী হয়ে সুফীরা এই দীনের একটা পা কেটে ফেলেছিলেন। ফলে এ দীন স্থবির হয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল, যার পরিণতি এড়ানো যাচ্ছে না আজও।
.
যে জিনিসের গতি নেই সেটা মৃত, গতিই প্রাণ। সুফিবাদের প্রভাবে এক পা হারিয়ে এই জাতি চলার শক্তি হারাল তারপর ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। যে জাতি শরিয়াহ আর মারেফাতের দু’পায়ে হেঁটে আরব থেকে বের হয়ে আটলান্টিকের তীর আর চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত গেলো, সে জাতি ফকিহ, মুফাসসির আর সুফীদের কাজের ফলে চলার শক্তি হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো- সূচিত হলো মুসলিম জাতিটির অধঃপতনের প্রাথমিক ধাপ। সেদিনের ওই পথভ্রষ্টতার বীজ সময়ের পরিক্রমায় চারা গজিয়ে এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।