গেইলদের রেকর্ডের দিনে জিম্বাবুয়ের হার
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘রান মেশিন’ গেইল ঝড়েই কুপোকাত হলো জিম্বাবুয়ে। তার সাথে স্যামুয়েলসের শতক হঁকানো ইনিংস আর বোলারদের দায়িত্বশীল বোলিংয়ে একরকম উড়েই গেল জিম্বাবুয়ের ম্যাচ। গত কাল ক্যানবেরায় ম্যাচের সাথে সাথে ক্যারিবীয়রা পায় কয়েকটি যুগান্তকারী রেকর্ডও। প্রথমে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে করা ৩৭৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ৪৪.৩ ওভারে ২৮৯ রানেই থেমে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং। ফলে, গত কালের ম্যাচে ৭৩ রানের জয় পায় ক্যারিবীয়রা। ম্যাচের শুরুতে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র দুই উইকেটে ৩৭২ রান সংগ্রহ করে।
ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ডোয়াইন স্মিথ আউট হলে গেইল আর স্যামুয়েলস ৩৭২ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়ে দলকে অনন্য এক উচ্চতায় তুলে দেন। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ক্যারিবীয় ব্যাটিং তারকা ক্রিস গেইল তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ২১৫ রান করেন। এছাড়া বিশ্বকাপের নতুন ইতিহাস তৈরি করে গেইল ১৪৭ বলে ১০টি চার আর ১৬টি ছয় হাঁকিয়ে তার ইনিংসটি সাজান। এর আগে ৭৯ রান করে নয় হাজারি ক্লাবেও নাম লেখান এ বাঁহাতি ‘ড্যাশিং’ ওপেনার। এগারোতম বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতক হাঁকাতে গেইল খেলেন মাত্র ১০৫ বল। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে মারলন স্যামুয়েলস ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক হাঁকিয়ে ১৫৬ বলে ১৩৩ রান করে থাকেন অপরাজিত। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান তার ইনিংসটি সাজান ১১টি চার আর তিনটি ছয়ের সাহায্যে।
ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে আসেন রেগিস চাকাভা এবং সিকান্দার রাজা। বৃষ্টির কারণে ২.৩ ওভার হতেই থেমে যায় ম্যাচটি। সে সময় এক উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ছিল ১৮ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জেসন হোল্ডার এলবি’র ফাঁদে ফেলে চাকাভাকে সাজঘরে ফেরান। বৃষ্টির পর পুনরায় খেলা শুরু হলে জিম্বাবুয়ের সামনে নতুন টার্গেট দাঁড়ায়। ওই সময়কার ঘোষণা অনুযায়ী জিততে হলে ৪৮ ওভারে ৩৬৩ রান করার লক্ষ্য দেওয়া হয় জিম্বাবুয়েকে। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে দলীয় ২৬ রানে মাসাকাদজাকে এলবি’র ফাঁদে ফেলেন জেরম টেইলর। আর দলীয় ৪৬ রানে সাজঘরে ফেরেন ২৬ রান করা সিকান্দার রাজা। টেইলর আর উইলিয়ামসন মিলে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ের রানের চাকা। তবে ২১তম ওভারের প্রথম বলে স্যামুয়েলসের বলে উইকেটের পিছনে দিনেশ রামদিনের গ্লাভসে ধরা পড়েন টেইলর। দলীয় ১২৬ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। ২৮তম ওভারের পঞ্চম বলে হোল্ডারের বলে স্মিথের তালুবন্দি হন ৭৬ রান করা শেন উইলিয়ামসন। ফলে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৭৭ রান। টেইলর ফিরলেও রানের চাকা সচল রাখেন উইলিয়ামসন। আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ৯টি চারে ৭৬ রান করেন তিনি। এ ম্যাচে ক্রেইগ আরভিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধশতক হাঁকান। ম্যাচের এ পর্যায়ে আবারও সেই গেইল হামলা। দলীয় ২২৬ রানের মাথায় ক্রিস গেইলের বলে আউট হন ৭টি চার আর একটি ছয়ে ৪১ বলে ৫২ রান করা আরভিন। আউট হওয়ার আগে আরভিন আর মাতসেকেনেরি মিলে ৫.৫ ওভার ব্যাট করে ৪৯ রান তোলেন। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে জাদু দেখানো অব্যাহত রাখেন ক্রিস গেইল। নিজের আগের ওভারে আরভিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর তিনি সাজঘরে ফেরত পাঠান ১৯ রান করা মাতসেকেনেরিকে। জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরা করেন ২১ রান। আর কোনো ব্যাটসম্যান বড় সংগ্রহ করতে না পারলে ১৮৯ রানেই শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম জোড়া শতক, ক্রিকেট ইতিহসে সবচেয়ে দ্রুত জোড়া শতক, একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়া এবং বোলিংয়ে দুই উইকেট শিকার করা অপ্রতিরোধ্য ক্রিস গেইল ম্যাচসেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩৭২/২ (স্মিথ ০, গেইল ২১৫, স্যামুয়েলস ১৩৩*; মাসাকাদজা ১/৩৯, পানিয়াঙ্গারা ১/৮২)
জিম্বাবুয়ে: ৪৪.৩ ওভারে ২৮৯ (রাজা ২৬, চাকাভা ২, মাসাকাদজা ৫, টেইলর ৩৭, উইলিয়ামস ৭৬, আরভিন ৫২, মাটসিকেনিয়ারি ১৯, চিগুম্বুরা ২১, পানিয়াঙ্গারা ৪, চাটারা ১৬, কামুনগোজি ৬*; টেইলর ৩/৩৮, হোল্ডার ৩/৪৮, গেইল ২/৩৫, মিলার ১/৪৮, স্যামুয়েলস ১/৫৯)