চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ ৪
চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্মাণাধীন আলোচিত সুইমিং পুল ঘেরাও কর্মসূচিতে মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা টিনের বেষ্টনী উপড়ে নির্মাণসামগ্রী ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, আসকার দীঘি এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ করে। বাধা দিলে কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে।
এই ঘটনায় চার নেতাকর্র্মী গুলিবিদ্ধ ও অন্তত ২০ জন কমবেশি আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। দুইজন পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও নির্ভরযোগ্য কেউ তা নিশ্চিত করেননি। আউটার স্টেডিয়ামের সংঘর্ষ থামার পর আন্দোলনে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে নগরীর ওয়াসা মোড় ও জিইসি এলাকায়ও বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে অন্য একটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে যে কোনো মূল্যে সুইমিং পুল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।
গত রবিবার দুপুরে সুইমিং পুল নির্মাণ বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এ প্রসঙ্গে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর বিকেলে আমরা মাঠে সমাবেশ করতে গিয়েছি। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার কথা। মানুষ যানজটে কষ্ট পাবে বলে রাস্তায় সমাবেশ করতে চাইনি। পুলিশ আমাদের মাঠে ঢুকতে বাধা দেয়। এরপর আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।’
পুলিশ কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে প্রশ্ন তুলে এই নেতা বলেন, ‘প্রথমত এই এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ ধ্বংস হচ্ছে। আরো দুটি পুল রেখে এখানে নতুন করে পুল নির্মাণের নামে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। আমরা খবর নিয়েছি, এই প্রকল্প কেবল জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। একনেক, সিডিএ’র অনুমোদন নেই। এমনকি সিটি করপোরেশনের উদ্যান সংরক্ষণ নীতিমালা পরিপন্থী। আমরা এসব পুলিশকে বলে কেবল সমাবেশ করতে চেয়েছি। কিন্তু পুলিশ কেনো বাধা দিলো। পুলিশ কার হয়ে কাজ করছে ?’
রনির দাবি- সংঘর্ষে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম সামদানি জনি, অমিতাব চৌধুরী বাবু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য লিটন চৌধুরী রিংকু ও ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহত আরও অন্তত ২০ জনকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আউটার স্টেডিয়ামে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর তারা কিছুক্ষণ সড়কে বিক্ষোভ করলে কাজীর দেউড়ি থেকে লাভলেইন ও আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশি বাধা উপক্ষো করে নির্মাণাধীন সুইমিং পুলের বিভিন্ন সামগ্রী ভাংচুর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। দু’পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে দাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে ত্রিশ মিনিট ধরে। এ সময় আশপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের দু’জন সদস্য গুরতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পুলিশও এ বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীর খেলাধুলার তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত আউটার স্টেডিয়ামের মোট আয়তন ৬.৯ একর। এর বড় একটি অংশে এর আগেই মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি অংশে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪০ ফুট প্রস্থের সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সিজেকেএস। সুইমিং কমপ্লেক্সের সাথে বুক স্টল, বাস স্টপ, পাবলিক টয়লেট, পার্কিং জোন, ফুড জোনও নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরীতে আরও দুটি সুইমিং পুলকে অব্যবহৃত রেখে নতুন করে পুল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল ছাত্রলীগ।