বাংলাবান্ধায় চালু হলো স্বপ্নের ইমিগ্রেশন
ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: বন্দর চালু হওয়ার প্রায় দেড় যুগ পর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে চালু হলো স্বপ্নের ইমিগ্রেশন। দীর্ঘদিন থেকে পঞ্চগড়বাসী বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালুর জন্য আন্দোলন করে আসছিল। বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ সকল ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ফলক উম্মোচন করে ইমিগ্রেশনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজয় কুমার সিং।
ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় বদলে গেছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের চিত্রও। সেই সাথে পাল্টে যাবে হিমালয় কন্যা খ্যাত পঞ্চগড় জেলার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট। পঞ্চগড় পরিনত হবে শিল্প ও পর্যটন নগরীতে।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজয় কুমার সিং বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে মিল রয়েছে। এই স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালুর মাধ্যমে দুই দেশের ভ্রাতৃত্ববন্ধন আরও দুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের চেষ্টায় দুদেশের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে আরও অনেক দূর। আর এর যাত্রা কেবল শুরু। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় দুদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নসহ পর্যটন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী গৌতম দেব, বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড মোজাম্মেল হক খান, অতিরিক্ত সচিব ইমিগ্রেশন গোলাম মোস্তফা, স্থলবন্দর চেয়ারম্যান তপন কুমার চট্টপাধ্যায়, পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান, অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকশিনার মোয়াজ্জেম আলী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান চতুর্দেশীয় ব্যবসা বানিজ্যের অপার সম্ভাবনাময় কেন্দ্রস্থল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
সড়ক পথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য স¤প্রসারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এখান থেকে ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘা দূরত্ব ১১ কিলোমিটার, শিলিগুড়ি ১০ কিলোমিটার, ভূটান ৬৮ কিলোমিটার, দার্জিলিং ৫৮ কিলোমিটার, নেপাল ৬১ কিলোমিটার।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর সিদ্ধান্তের খবরে এখন আনন্দে উল্লাসিত পঞ্চগড়বাসী। হাজার হাজার মানুষ ইমিগ্রেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
১৯৯৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ১০ একর জমির উপর জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষে চালু হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। পরবর্তীতে ২০১১ সালে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়
২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম উদ্বোধনে (বাংলাদেশের পক্ষে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং ভারতের পক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জী) উভয় দেশই ৬ মাসের মধ্যে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট (মানুষ পারাপার) চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় ব্যবসা-বানিজ্যের পাশাপাশি মানুষও সহজ প্রক্রিয়ায় চারটি দেশে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে পঞ্চগড় জেলা পরিনত হবে পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে। এছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের মিলন মেলায় পরিনত হবে পঞ্চগড়।