Connecting You with the Truth

ভয়াবহ ২১ আগস্ট আজ

21-Aug-Killing

ভয়াবহ ২১ আগস্ট আজ, ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা, যে হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভী রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।

২০০৪ সালের সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগষ্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

বর্তমানে মামলা দুটি ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ আদালতের বিচারক হলেন মো. শাহেদ নূর উদ্দিন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ এজলাসে চলছে মামলার বিচার। মামলার মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এদের মধ্যে ২৬ জন কারাগারে। জামিনে ৮ জন। দেশে-বিদেশে পলাতক আছেন আরো ১৯ জন।

জানা গেছে, এ মামলার ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিচারে সাক্ষী গ্রহণ শুরু হওয়ার ২৭৭ দিনের মধ্যে এসব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী গুরুত্বপূর্ণ কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ৪০ জন সাক্ষীও আদালতে সাক্ষ্য দেননি। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চলতি বছর বিচার কার্যক্রম শেষ না হলেও আগামী বছর (২০১৬ সাল) মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে। তবে আসামিপক্ষের একাধিক আইনজীবী বলেছেন, কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হতে।

এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ১১ জনকে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেন। আইনজীবীদের মধ্যে অধিকাংশই মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত থাকেন। একমাত্র প্রধান কৌসুলী ছাড়া অন্যরা উপস্থিত থাকেন না বললেই চলে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদেও মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রীত্ব ও সরকারের সঙ্গে অন্যভাবে জড়িত হওয়ার পর থেকে মামলার দিকে অনেকটা নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার, অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান, অ্যাডভোকেট সানজীদা খাতুনের নাম উল্লেখযোগ্য।

অন্য আইনজীবীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আগে সাহারা খাতুন ও কামরুল ইসলাম আদালতে আসলেও এখন আর তারা আসেন না। তবে অদৃশ্য কারণে আমাদের পক্ষের অনেক বন্ধুই কোনোদিন আদালতে হাজির হননি। তবে কেউ কেউ মাঝে মধ্যে হাজির হন। তারা হাজির থাকলে আরো ভালো হতো।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘মাঝে মধ্যে হাজির থাকি। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যে কারণে অনেক দিনই হাজির হতে পারি না।’

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী আদালতে হাজির হন না, তা আমার জানা ছিল না। এ বিষয়টি আমি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। আইনজীবীরা যাতে আদালতে উপস্থিত থাকেন সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।`

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের অপ্রাসঙ্গিক জেরা করেও বিচারকে বিলম্বিত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের ২৭ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা ইউসুফের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। প্রায় তিন মাস সময় লাগে এ সাক্ষীর জেরা শেষ হতে। এভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হতে অনেক সময় লেগেছে।

এ প্রসঙ্গে মামলার অন্যতম আসামি আবদুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আসামিপক্ষকে সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ দিতে হবে। আদালত আমাদের সেই সময়ও দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০০৮ সালের ৯ জুন দালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। প্রথম তদন্ত রিপোর্ট আমলে নেয়া হয় ২০০৮ সালের ২৫ জুন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট শুরু হয় পুনঃতদন্ত। পুনঃতদন্ত রিপোর্ট জমা হয় ২০১১ সালের ৩ জুলাই।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Comments
Loading...