Connecting You with the Truth

সন্ত্রাস দমনে প্রয়োজন নির্ভুল আদর্শ

hezbuttawheedনিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী এক মহাযুদ্ধের আয়োজন চলছে। ইস্যু হিসাবে নেওয়া হয়েছে জঙ্গিবাদ। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় তারা মত্ত। আমাদের দেশেও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতিতে দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষ সকল প্রকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই দেশের জনগণকে সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই” শীর্ষক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর হাজারীবাগ পার্ক মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদ এবং মিডিয়া পার্টনার হিসাবে সহযোগিতা করে ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’, ‘বাংলাদেশেরপত্র.কম’ ও ‘জেটিভি অনলাইন’।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও মুখ্য আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের লালবাগ শাখার আমীর মোহাম্মদ আল-আমিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের আমীর ও জেটিভি অনলাইনের চেয়ারম্যান মসীহ উর রহমান, ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো: আক্তার হোসেন, হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগরের আমীর মো. আলী হোসেন, হেযবুত তওহীদের মিরপুর শাখার মুখপাত্র আব্দুল হক বাবুল, হাজারীবাগ থানা কৃষকলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান শান্ত, বাংলাদেশ যুবলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান মাসুম, স্ক্যাভেঞ্জারস ইউনিয়ন ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ-সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ, ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, হেযবুত তওহীদের লালবাগ শাখার মুখপাত্র বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক জাকারিয়া হাবীবসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। বিকৃত ধর্মীয় আদর্শ থেকে উদ্ভূত এই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে বিশ্বময় শক্তি প্রয়োগের পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সকলেই স্বীকার করছেন যে, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় দলিল ভিত্তিক নির্ভুল আদর্শ দিয়ে জঙ্গিবাদ যে ভুল পথ তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাতেই থাকবে। ফলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকেও ইরাক-সিরিয়ার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নানামুখি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের সরকার বারবার বলছে- বাংলাদেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এত বড় দুঃসংবাদ, এত বড় আতঙ্কজনক খবর শুনেও মানুষ কীভাবে নির্বিকার থাকতে পারে তা আমার বুঝে আসে না। মানুষ কেন সিরিয়ার দিকে তাকায় না? কেন ইরাকের দিকে তাকায় না? কেন লিবিয়ার দিকে তাকায় না? সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষের রক্ত ঝরেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। লাখো মসজিদ-মাদ্রাসা মাটির সাথে মিশে গেছে। আকাশ থেকে টনকে টন বোমা পড়েছে। ওই বোমা দেখেনি- কে নামাজী কে বেনামাজী, কে লেবাসধারী কে লেবাসহীন, কে আস্তিক কে নাস্তিক, কে সৎ কে অসৎ, কে মুসলিম কে অমুসলিম, কে ধনী কে দরিদ্র, কে মাদ্রাসার ছাত্র কে জেনারেল শিক্ষিত, কে মসজিদের সভাপতি কে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। সিরিয়ার মানুষ এখন ঘাস খাচ্ছে। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হবার দাবিদাররা ঘাস-লতা-পাতা খেয়ে বেঁচে আছে! মরেছে মানুষ, বিধ্বস্ত হয়েছে মানুষের বসতি, অনিশ্চিত হয়েছে মানুষের ভবিষ্যত। এর জন্য কে দায়ী? আল্লাহ দায়ী নয়। দায়ী মানুষ নিজেই। এ পরিণতি তাদের দু’হাতের কামাই। বাংলাদেশেও যেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য এখনই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে মানুষকে এই সঙ্কট থেকে বাঁচানো এখন আমাদের বড় ইবাদত। এটা একদিকে আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব অন্যদিকে এটা সামাজিক কর্তব্য। কারণ এ সমাজ যদি ধ্বংস হয়ে যায় তবে আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? তাই আমাদেরকে সকল প্রকার বিভেদ ভুলে এখন একটাই করণীয়- সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসা-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে ইসপাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা যদি ষোল কোটি মানুষ ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তবে আমরাই হব পৃথিবীর পরাশক্তি, আমরা সমগ্র পৃথিবীকে ন্যায়ের পক্ষে নেতৃত্ব দেব। তার জন্য যে আদর্শ দরকার তা আল্লাহ রহম আমাদের কাছে আছে। মহান আল্লাহ অতিব দয়া করে সেই সত্য আমাদেরকে দান করেছেন। ইনশাল্লাহ এবার আর কোনো শয়তানি শক্তি আমাদেরকে রুখতে পারবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ যুবলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাবেক সম্পাদক আরিফুর রহমান মাসুম বলেন, মূল বিষয়বস্তুর উপরে মুখ্য আলোচক হেযবুত তওহীদের এমাম অত্যন্ত সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন, আমি শুধু তাঁর সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলতে চাই এদেশে ইসলামের নামে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী মহল বিভিন্ন সময় দেশের ক্ষতি সাধন করেছে। ইসলামের নাম করে তারা গাড়িতে আগুন দিয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, পবিত্র কোর’আন পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই শ্রেণিটিই ১৯৭১ সালে ধর্মের নাম করে এদেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। তিনি শাপলা চত্বরের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন সেদিন হেফাজতে ইসলাম যে কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল তাও ইসলামের নামেই ঘটিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের সমাজে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি চলছে, যে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের যে বিস্তার ঘটানো হচ্ছে তার সমাধানে হেযবুত তওহীদ উদ্যোগ গ্রহণ করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। হেযবুত তওহীদের এই বক্তব্যগুলো মানুষের সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরা দরকার। তিনি সকলের প্রতি আহ্বান করে বলেন, ঢাকাতে প্রায় একশ’ ওয়ার্ড আছে, এধরনের অনুষ্ঠান আয়জনের মাধ্যমে সমস্ত ঢাকাসহ সারা দেশে এই বক্তব্য আপনারা ছড়িয়ে দিন। আমি বিশ্বাস করি এই বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছাতে পারলে খুব দ্রুত সমাজ থেকে সকল অন্যায় দূর হয়ে যাবে।
স্ক্যাভেঞ্জারস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ হেযবুত তওহীদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন হেযবুত তওহীদের এমামের এই বক্তব্য দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
হেযবুত তওহীদের আমীর মসীহ উর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং আমাদের দেশেও যে ষড়যন্ত্র চলছে তা থেকে দেশকে, জাতিকে রক্ষা করতে হলে জনসাধরণকে সচেতন করে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের কোনো বিকল্প নেই। তাদেরকে বোঝাতে হবে কেন তারা ঐক্যবদ্ধ হবে, কেন তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, কেন দেশ রক্ষায় অবদান রাখবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো: আক্তার হোসেন, হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগরের আমীর মো. আলী হোসেন, হেযবুত তওহীদের মিরপুর শাখার মুখপাত্র আব্দুল হক বাবুল, ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন।
বক্তারা দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করে বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মানুষের ধর্ম হলো মানবতা, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বোঝা, অন্যের দুর্দশা দেখার পর হৃদয়ে দুঃখ অনুভব করা এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা। আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষ কখনোই ধার্মিক বা মো’মেন-মুসলিম হতে পারে না। প্রকৃত মো’মেন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জীবন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেন। সুতরাং স্বার্থপরের নামাজ নেই, স্বার্থপরের সমাজ নেই, স্বার্থপরের জান্নাত নেই। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে হেযবুত তওহীদের এমামের সাথে সাক্ষাতের জন্য সাধারণ মানুষ ভিড় জমান। তাঁর মাথায় হাত দিয়ে অনেকেই দোয়া করেন। সন্ধ্যার পরেও দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শক-শ্রোতারা গভীর মনোযোগ সহকারে ও অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বক্তব্য শোনেন এবং বজ্রকণ্ঠে হেযবুত তওহীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

Comments
Loading...