Connecting You with the Truth

অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে উঠছে ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকার শিশুরা

Thakurgaon Bordar Picture-1 (1)আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ধর্মগড় সীমান্ত এলাকার শিশুরা বেড়ে উঠছে অযত্ন আর অবহেলায়। এসব এলাকার বেশির ভাগ মানুষ অভাবি হওয়ার কারণে তাদের শিশুদের সময় কাটছে খেলাধুলা ও সীমান্তের নাগর নদীর পাড়ে আড্ডা দিয়ে। তবে এসব শিশুদের বেশির ভাগই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এর কারণ হলো অভাবি ওই পরিবারগুলো সময় মতো তাদের শিশুদের মুখে খাবার না দেওয়া।
সরেজমিনে শাহানাবাদ গ্রামের ওই সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। কারো সংসার চলে অন্যে বাড়িতে কাজ করে, কেউ আবার জেলে। এর পাশাপাশি অনেকের হালের গরু রয়েছে। ওই গরু দিয়ে অন্যের জমিতে হাল চাষ করে যে টাকা পায় সেটি দিয়েই সংসার চলে তাদের। শুধু তাই নয়, অনেক পরিবারের বাবা-মা তাদের সন্তানদের নদীর ধারে বসিয়ে রেখে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। এমন সময় কথা হয় নিজাম উদ্দিন নামে এক কৃষকের সঙ্গে।
তার নিজের কোনো জমি নেই। রয়েছে শুধু থাকার একটি ঘর। অন্যের জমিতে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে কাজ করে যে টাকা পান সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ করেন তিনি। ছয় সন্তানের জনক নিজাম উদ্দিন। এর মধ্যে তিন ছেলে ৩ মেয়ে। ছেলেরা কয়েকদিন স্কুলে গেলেও পরে আর স্কুলে যেতে দেননি নিজাম উদ্দিন।
সন্তানদের স্কুলে না যেতে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন, আমাদের তো টাকা পয়সা নাই। তাছাড়া স্কুলে গেলে তো আর আজকালের মধ্যে অফিসার হয়ে যাবে না। তাই আমার সঙ্গে কাজে নিয়ে আসি যেন তাড়াতাড়ি কাজ শিখতে পারে।
তিনি আরও জানান, সীমান্ত এ এলাকার প্রায় ৬ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বা উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় এ গ্রামের বেশিরভাগ শিশু স্কুলে যেতে চায় না। এ কারণে লেখাপড়ার প্রতি তাদের সন্তানদের কোনো আগ্রহ নেয়।
নিজাম উদ্দিনের ছেলে আবু রহিম (১২) জানায়, অনেক দূরে স্কুল। হেঁটে যেতে অনেক সময় লাগে। এরপর স্কুলে যাওয়ার পর খুব ক্ষুধা লাগে। সে আরও জানায় কয়েকদিন হেঁটে হেঁটে স্কুল গেছিলাম।
এরপর বাড়ি আসে অনেক অসুস্থ হয়ে গেছিলাম। তাই আর স্কুলে যায়না। এজন্য প্রতিদিন বাবার সঙ্গে মাঠে যায় কাজ শিখতে। শুধু আবু রহিম নয়। তার মতো অনেক শিশু স্কুলে না গিয়ে সীমান্তের ধারে বিভিন্ন খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর কারণ হলো অভাব আর আশে পাশে স্কুল না থাকা। এর পাশাপাশি ওইসব শিশুরা সময় মতো তিন বেলা খাবার না পাওয়ায় দিনের পর দিন তারা অপুষ্টিতে ভুগছে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নেওয়াজ জানান, সময় মতো এবং পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার কারণে শিশুরা সাধারণত পুষ্টিহীনতায় ভুগে থাকে।
এসব বিষয়ে হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, সীমান্তের ওই এলাকগুলোা প্রত্যন্ত এবং যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়া হয়না। তবে সরকারিভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।

Comments
Loading...