আসন্ন বিশ্বসঙ্কট সম্পর্কে অবশ্যই জাতিকে সজাগ হতে হবে -হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
রাজধানীর মিরপুরে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন বিশ্বসঙ্কট সম্পর্কে জাতিকে অবশ্যই সজাগ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। আজ সোমবার রাজধানীর মিরপুর দারুস-সালামের দিয়াবাড়ী রোড বালুর মাঠে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর জাতীয় যুব শ্রমিক লীগের সহযোগিতায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি ও মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মো. আবুল হোসেন কোম্পানী এবং উদ্বোধন করেন শাহ্ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আগাখাঁন মিন্টু। বিশেষ অতিথি হিসাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর মিরপুর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল হক বাবুল।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম আরও বলেন মানুষ পশুর মতো কোন সৃষ্টি নয়, সে আল্লাহর রূহ ধারণকারী, আল্লাহর খলিফা। তাকে আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছেন। কেবল পশুর মতো জীবনযাপন করলে চলবে না, তাকে ভাবতে হবে তার নিজেকে নিয়ে, তার পরিবার নিয়ে, সমাজ নিয়ে, দেশ নিয়ে এবং এই মানবজাতিকে নিয়ে অর্থাৎ বিশ্বকে নিয়ে। সমস্ত বিশ্ব এখন ভয়াবহ যুদ্ধ আতঙ্কে। পরাশক্তিগুলো এতদিন থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে শাসন-শোষণ করেছে, শত শত বছর লুণ্ঠন চালিয়েছে আর গত শতাব্দী থেকে শুরু করেছে জঙ্গিবাদ ইস্যু সৃষ্টি করে হামলা চালিয়ে দেশ ধ্বংস করা, দখল করা এবং সেখানে আজ্ঞাবহ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এখন পরাশক্তিগুলো নিজেরা নিজেরা পারমাণবিক যুদ্ধের মুখোমুখী। এ কথা ভুললে চলবে না যে, গত দুইটা বিশ্বযুদ্ধে তারা ১১ কোটি বনিআদমকে হত্যা করেছে। এখন যদি সত্যিই এই যুদ্ধ লেগে যায় তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সমগ্র পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন এই পরিস্থিতিতে আমাদের চুপচাপ বসে থাকার কোনো উপায় নেই। আমাদেরকে ভাবতে হবে কীভাবে অন্তত আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে আমরা রক্ষা করতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদকে ইস্যু করেই একটির পর একটি মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের দেশও ৪র্থ বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ। কাজেই এই দেশকে যদি জঙ্গিরাষ্ট্র প্রমাণ করা যায় তবে এ দেশেও যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া যাবে। সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে। এ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে এই মুহূর্তে একটাই করণীয়- সমস্ত বিভেদ, বিভাজন ভুলে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে ৭১ এর পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি কিন্তু এক নয়, তখন মানুষের মধ্যে রাজনীতিকভাবে এতটা বিভক্তি ছিল না, ধর্মকে ভিত্তি করেও বিভাজন অনেক কম ছিল। তখন জাতিটাকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হয়েছিল বলেই বড় সঙ্কট থেকে জাতি বেঁচেছিল, দেশ স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। একদিকে চলছে জঙ্গিবাদ অন্যদিকে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, জাতিবিনাশী কর্মকা- চালায়। আর স্বার্থপর, ধান্দাবাজ রাজনীতিকরা রাজনীতির নামে মানুষকে শোষণ করেছে। আবার বিভক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিকে ডিভাইড করা হয়েছে, বিভক্ত করা হয়েছে। আজকে আমাদের ডাক্তার বিভক্ত, আমাদের বুদ্ধিজীবী বিভক্ত, আমাদের আইনজীবীরা বিভক্ত, রাজনীতিকরা শত্রুভাবাপন্ন, আমাদের ধর্মগুরুরা বিভক্ত। এত বিভক্তি রেখে এই বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এখন এই মুহূর্তে কী করণীয়?
হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম বলেন, এখন একটাই করণীয়- জাতির মধ্যেকার সমস্ত বিভক্তিমূলক দেওয়াল ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। প্রশ্ন হলো, তারা কিসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে, কার কথায় ঐক্যবদ্ধ হবে? ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য একটি নির্ভুল আদর্শ লাগবে। সেই আদর্শ আল্লাহ অতি দয়া করে এই মাটিতে দিয়েছেন। তিনি বলেন এই আদর্শই তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ। জাতি যদি এই আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় তবে তারা বাঁচবে। এখন সেই আদর্শটা কী? সেই আদর্শ হলো- যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এটা যদি ইসলামের দৃষ্টিতে বলা যায় তবে এটাই হলো কলেমার শিক্ষা। অর্থাৎ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মদুর রসুলাল্লাহ (সা.)- আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুম দাতা নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল।” আল্লাহর হুকুম মানেই হলো যাবতীয় ন্যায়, সত্য। এই ন্যায় ও সত্যকে যারা মেনে নেবে, সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবে তারা যেমন এই দুনিয়াতেও বাঁচবে তেমনি আখেরাতেও তারা পাবে জান্নাত। এটাই এখন মানুষের প্রধান এবাদত, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতিকে রক্ষা করা, মানুষের কল্যাণে অবদান রাখা। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষুদ্র স্বার্থের উপরে সবাইকে এখন উঠতে হবে। এখন আর জঙ্গিবাদ চলবে না, ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা চলবে না, অপরাজনীতি চলবে না, স্বার্থের রাজনীতি চলবে না। এগুলো করলে দেশও থাকবে না, জাতিও থাকবে না, দলও থাকবে না কিছুই থাকবে না। যেটা ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তানে হয়েছে। দেশকে রক্ষা করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা এখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
শ্রমিক দিবস উপলক্ষে তিনি বলেন, প্রতি বছর ঘটা করে নানা আয়োজনে শ্রমিক দিবস পালন করা হয় কিন্তু এতে কি শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে? এভাবে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। কেবল শ্রমিকরা নয়, আসলে প্রতিটা শ্রেণির মানুষ এখন শোষিত, অধিকার বঞ্চিত। প্রত্যেকেই তার অধিকার ফিরে পাবে যদি আমরা একটা সঠিক আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তাহলে এখন প্রয়োজন হলো সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।
তিনি সকলকে জাতি-বর্ণ-ধর্ম-দল নির্বিশেষে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।