ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বিশ্বব্যাংক – প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের নেপথ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের কথা বলে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েছিলেন। রোববার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় গোলচত্বরে সুধীসমাবেশের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, যা খুবই গৌরবের। তিনি বলেন, প্রথমে পদ্মা সেতুর কাজ আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে ফের ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়মানুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকসহ পশ্চিমা বিশ্বের কিছু নেতা পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মাওয়ার সমাবেশে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি সমর্থন দিয়েছি। গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংক পাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে দরিদ্র মানুষের জন্য সেই টাকা ব্যয় করার কথা ছিল; কিন্তু ফোনের কোনো লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংক পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনানুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির বয়সসীমা ৬০ বছর হলেও ড. ইউনূসের বয়স ৭০ বছর হয়ে গিয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রস্তাব দেয়া হল এমডি পদ ছেড়ে দিয়ে উপদেষ্টা হিসেবে তিনি যেন গ্রামীণ ব্যাংকে থাকেন। কিন্তু তিনি সেটি না মেনে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে দিলেন।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অনুমোদন ছাড়াই এমডি ছিলেন এবং সরকারি বেতনও নিতেন। এটি সম্পূর্ণ ইলিগ্যাল। তাকে আমরা কখনও অসম্মান করতে চাইনি।
‘অর্থমন্ত্রী ও গওহর রিজভী ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তাকে ইমেরিটাস অ্যাডভাইজার করার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন দুটি। একটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে, আরেকটি সরকারের বিরুদ্ধে। কোর্ট চাইলে সেই বেতন ফেরত নিতে পারতেন।’
এমডি পদ হারিয়ে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আটকানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটন তাকে এমডি রাখতে ফোন করেন। টনি ব্লেয়ার ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার ফোন করলেন। পশ্চিমা দেশের অনেক রাষ্ট্রদূত এসে আমাকে হুমকি দিতেন। ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হলে পদ্মা সেতু হবে না- ইত্যাদি ইত্যাদি।
পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল, যার পেছনে ছিলেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, তারা দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন, আমি বললাম- আমি প্রমাণ চাই। তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বারবার তারা তদন্ত করলেন; কিন্তু কোনো প্রমাণ পেলেন না। স্টেট ব্যাংক আমার ছেলে জয়কে তিনবার ডেকে নিয়ে শাসিয়েছে। এটি নিয়ে মামলা হয়েছে। আমরা প্রমাণ করেছি- সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা; কোনো দুর্নীতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
‘জনগণের ওপর আমার ভরসা ছিল। সেই ভরসা নিয়েই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেছি। অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে করছি। কিন্তু এর পেছনে যে অপমান, যে নির্যাতন আমাদের ভোগ করতে হয়েছে, এর পেছনে দেশের কিছু লোক জড়িত; যারা গরিবকে টাকা দিয়ে সুদ খায়, তারা এর চেয়ে বেশি কী করতে পারে?’
প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ার দোগাছির পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ার-১ এর মাঠে অবতরণ করেন। এর পর গাড়িতে যান সেতু এলাকায়। মাওয়া থেকে গিয়ে বিকালে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তার।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ৭ নম্বর খুঁটিতেই পাইল স্থাপনের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। পদ্মা সেতুর ৪২ খুঁটিতে ৪১ স্প্যান বসবে। এর মধ্যে ১৪ খুঁটি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। আর নদীতে ১৮০ পাইল স্থাপন করা হয়েছে।