Connecting You with the Truth

কামারপাড়ায় চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদুল আযহার কোরবানির পশুর হাটে চলছে পশু বেচাকেনার প্রস্তুতি, পাশাপাশি দা, ছুরি,চাকু,চাপাতি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে কামারদের। কোরবানিদাতা পরিবারের সদস্যরা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কসাইরা নিজেদের চাহিদামতো দা, ছুরি, চাকু, চাপাতি, কুড়াল, বটি জোগাড় করতে সবাই ছুটছেন কামারদের কাছে সান দেয়ার জন্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় সিরাজদিখানে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার তথা সিরাজদিখান বাজার, ইছাপুরা বাজার,তালতলা বাজার,মধ্যপাড়া বাজার, উপজেলার মোর, নিমতলার বাজার,রশুনীয়া বাজা, কুসুমপুর বাজার,বৌ বাজার সহ ছোট-বড়সকল হাটের সর্বত্র কামারদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে এখন। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন তারা দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, চাপাতি, বটিসহ ধারালো বিভিন্ন সামগ্রী।তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনো।
পুরনো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। কামাররা জানায়, এ পেশায় অধিক পরিশ্রম।আর শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পান না। কারণ লোহার বাজার দর বেশি। পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের সাথে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো সামগ্রী তৈরি করত তাহলে এ পেশাজীবীরাও মূল্যায়ন পেত বলে তারা মনে করেন।
জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনও আঁকড়ে আছেন।সারা বছর পরিবারে ও কৃষি জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে অনেকে কাছে এসে তা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কোরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন মনে হওয়ায় সকলেই এখন ছুটছেন কামারদের কাছে। আর এতেই এই মাসে জমজমাট হয়ে উঠে কামার পাড়া।
সিরাজদিখান বাজারের কামার সাধন কর্মকার বলেন, এবারের ঈদে চাহিদায় দিনরাতে ২০ থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন একেকজন কামার খরচ বাদে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন। তিনি আরো জানান, একটি বড় দা ৫ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৬শ টাকা, কুড়াল ১ কেজির ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাপাতি ৪ শত থেকে ৫ শত টাকা, বড় ছোরা ওজন মতে ৩ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা, পশু কুড়াল ৩ থেকে ৪শ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না। তাই ঈদের আগে এ পেশাজীবীদের সচ্ছল হওয়ার মোক্ষম সময়। এ কারণে অনেকে মজুদ করে ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছেন। ইছাপুরা বাজারের কামার জিতেন কর্মকার বলেন,সারা বছর আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে।
কিন্তু ঈদে অনেকেই পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকু কিনতে আসেন।আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি। অনেকে আবার কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃতকুড়াল, কাস্তে, কাঁচি, সাবল, টেঙ্গি কিনে নিয়েযায়।
তালতলা বাজারের কামারি পরিমল কর্মকার বলেন, আগে অন্য হাটবাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা রোজগার হতো। ঈদের আগে লোহার অস্ত্রেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৫০০ টাকা আয় হয়। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কামারিদের এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

Comments
Loading...