গুম-অপহরণ আর সহ্য করা হবে না বলে বিএনপির হুঁশিয়ারী
স্টাফ রিপোর্টার:
গুম-অপহরণ আর সহ্য করা হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে রাজধানীর নয়া পল্টন সড়কে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, “আজ সারাদেশে এক ভীতিকর ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। গুম-অপহরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করতে সরকার তার রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে।” এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকের মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমই প্রমাণ করেছে- জনগণ আর গুম-অপহরণ সহ্য করবে না। সরকারকে বলব, এটা বন্ধ করুন। দেশবাসীকে বলব- নিরবে গুম-অপহরণ দেখার সময় আর নেই। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ’ দিবসের দিন ৩০ অগাস্ট এই মানববন্ধনের কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এই কর্মসূচি গতকাল হলো। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে আরামবাগ সড়কের শেষ প্রান্ত নটরডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ২০ দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন হাতে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধনে অংশ নেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদেরও বড় আকারের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে উপস্থিত দেখা যায়। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দাও।’ মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত একটি নির্বাচন আয়োজনে বর্তমান সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।” বিশ্বব্যাপী গুম-অপহরণের প্রতিবাদে ও সচেতনতা তৈরিতে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ অগাস্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ পালন করে আসছে। এ জোটের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ সারাদেশে তাদের ৬৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “প্রতিদিন গুম হচ্ছে, রক্তপাত হচ্ছে। কেবল তাই নয়, আরো গুম করার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরাব ইলিয়াস অর্নব, খালেদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা, সম্রাট মোল্লার বোন কানিজ ফাতেমা রীতা, মো. সোহেল সরকারের বাবা শামসুর রহমান, তরিকুল ইসলাম তারার বাবা নুরুল ইসলাম, মাইনুল হাসানের বাবা সফর উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ, জহিরুল ইসলামের মা হোসনে আরা বেগম, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী, আদনানের বোন ফারহানা সুলতানাসহ নিখোঁজ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।