জীবন দিয়ে বিচারহীনতার প্রতিবাদ করে গেল শ্রীপুরের হযরত আলী-চেয়ারম্যান মানবাধিকার কমিশন
মাহমুদুল হাসান,শ্রীপুর: বিচারহীনতা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে জীবন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল হযরত আলী বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক পহেলা মে সোমবার দুপুরে উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্নপুর সিটপাড়া গ্রামের হযরত আলীর বাড়ী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের চক্রে পড়েছে হতদরিদ্র নিঃস্ব মানুষ হযরত আলী তার জায়গার জমির লোভে তার পরিবারের ওপর বারবার অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। অসহায় হত দরিদ্র পরিবারটি বারবার নির্যাতিত হয়েও বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যসহ অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই পায়নি বরং তাদের এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি পক্ষ সুবিধা নিতে চায়। এদের মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় জনগন, জনপ্রতিনিধি ও নির্যাতিত পরিবারের সাথে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতিয়মান হয়েছে যে, প্রতিপক্ষের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কাছে বিচার চেয়ে বিচারহীনতার কারনেই হযরত আলী তার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ হযরত আলীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে এই অনভিপ্রেত ও দু:খজনক ঘটনার সূত্রপাত হতো না। হযরত আলীর অভিযোগটি শ্রীপুর থানা পুলিশ শুধু জি.ডি হিসেবে নিয়েছে এ জিডি তদন্ত করে পরবর্তি কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ । আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় মেয়েকে নিয়ে জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল ক্ষতিগ্রস্থ হযরত আলী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ হালিমাকে এখন থেকে আইনী নিরাপত্তা, আইনী সহায়তাসহ তাকে পুনর্বাসিত করার জন্য মানবাধিকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বিধবা হালিমাকে ভিক্ষা করে খেতে হবে না-এমন আশ্বাসও দেন তিনি।
এর আগে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনা আকতার, শ্রীপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান, অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই বাবুল এর বক্তব্য গ্রহন করেন। তদন্তকালে কমিশন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী, নিহতের স্ত্রী হালিমা ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) শরীফ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান, গণসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ, ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু প্রমূখ। উল্লেখ্য, সিটপাড়া গ্রামের হালিমার স্বামী হযরত আলী (৪৫) ও তার পালিত কন্যা আয়েশা (১০) ধর্ষনের চেষ্টার বিচার না পেয়ে গত ২৯ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টার দিকে ময়মনসিংহগামী আন্ত:নগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনায় বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ পেলে স্থানীয় প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। ঐ দিন সন্ধ্যায়ই শ্রীপুর থানা পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন ও তার পুত্র মিথুনকে আটক করে। এ ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় নিহতের স্ত্রী হালিমা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ১৮(৪)১৭নং মামলা দায়ের করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়ীতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পুলিশ প্রহরায় দাফন করা হয় নিহত হযরত আলী ও তার কন্যা আয়েশাকে।
এলাকাবাসী ও বাদী হালিমা জানায়, গত ২ মাস পূর্বে পাশের গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র ফারুক জোরপূর্বক আয়েশাকে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে ফেলে রেখে যায়। এ বিষয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহন না করে সেটি জি.ডি হিসেবে গ্রহন করে। পুলিশ সেই জি.ডি একজন এএসআই দিয়ে তদন্ত করিয়ে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। এ ঘটনার কয়েক দিন পর হযরত আলীর একটি ষাঁড় গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়েও হযরত আলী কারো নিকট কোন বিচার পায়নি। হালিমার স্বামী হযরত আলী স্থানীয় মেম্বার ও পুলিশের কাছে বিচার চেয়ে বিচার না পেয়ে মনের ক্ষোভে তার পালিত কন্যাকে সাথে নিয়ে শনিবার দিন সকালে শ্রীপুরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।