তারা ধর্মের নামে নারীকে বন্দি করতে চায় -প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার:
নারীর অগ্রযাত্রা রুখতে একটি শ্রেণি ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “ইসলামের নাম করে একটা শ্রেণি আমাদের নারী সমাজকে বন্দি করে রাখতে চায়। একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে, এটা অনেকেই ভুলে যায়।” আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারি অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “নারীদের পথে ইসলাম ধর্ম কখনও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু যারা আজ ইসলাম ধর্মের নাম করে বাধা দিতে চায়, তারা আসলে সত্যিকারের ইসলাম ধর্মটাকে ও ইসলামের সেই অনুশাসনকে দেখেও না দেখার চেষ্টা করে।” নিজের বক্তব্যের পক্ষে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আহ্বানে প্রথম নারী হিসেবে বিবি খাদিজার (রা.) ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। “ইসলামের জন্য প্রথম শহীদও হয়েছিলেন একজন নারী। কাজেই ইসলাম ধর্মে কিন্তু নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা আছে। সেটা আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে।” সমাজ গঠনে নারী-পুরুষের সমান ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা অংশকে পেছনে ফেলে একটি সমাজ-একটি দেশ উন্নত হতে পারে না।” আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নারী উন্নয়ন ও শিক্ষায় নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি। তার সরকারের সময় বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চপদে নারীদের অধিষ্ঠানের চিত্রও ওঠে আসে তার বক্তব্যে। বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতারও কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। “খুব দুঃখ লাগে, যখন আমরা দেখি প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত-সমৃদ্ধশালী হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ যখন সুনাম অর্জন করেছে। ঠিক সেই সময় এক সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমানে না সংসদে না সরকারে, নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন, পারেন নাই। এখন আবার তিনি শুরু করেছেন আন্দোলন?” নাশকতার জন্য অবরোধ আহ্বানকারী খালেদা জিয়াকে সরাসরি দায়ী করে তিনি বলেন, “অন্তঃস্বত্ত্বা নারীকেও পুড়িয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। নারী কি পুরুষ- দিনের পর দিন পেট্রলবোমা মেরে, ককটেল মেরে মানুষকে পুড়িয়ে মারা; এর থেকে জঘন্য কাজ আর কী হতে পারে? সেই জঘন্য কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন।” মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। “এ ধরনের জঘন্য ঘটনা, হীন কর্মকাণ্ড, মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে সকল নারী সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে দায়ী করে তার বিচারের কথাও বলেন সরকার প্রধান। “আমি শুধু এটুকুই বলব যে, এ ধরনের জঘন্য অপরাধ যিনি করে যাচ্ছেন, তার বিচার একদিন হবেই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।” মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিচিন। নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।