Connecting You with the Truth

ধর্মান্ধতা ও ধর্মবিদ্বেষ উভয়ই পরিত্যাজ্য

আমীরুল ইসলাম:

বর্তমানে আমাদেরকে একটি আসুরিক দানবের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই দানবের দুইটি হাত আছে। একটি হচ্ছে উগ্র, ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আর অপরটি হচ্ছে তথাকথিত প্রগতিশীল, মুক্তমনা দাবিদার উগ্রগোষ্ঠী। দানবের দু’টি হাত ক্রমাগত আমাদেরকে দুইদিক দিয়েই আঘাত করে যাচ্ছে। আমরা কখনো দানবের একহাতের আঘাত খেয়ে অন্যহাতের আশ্রয় গ্রহণ করি তো আবার অন্যহাতের আঘাত খেয়ে এই হাতের আশ্রয় গ্রহণ করি। আমরা বুঝতে পারছি না যে উভয় হাতই দানবের হাত। কোনটার চাইতে কোনটা কম নির্মম নয়। আপনি বলতে পারেন প্রগতিশীল, মুক্তমনা দাবিদাররা তো কখনো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেনা। তারা যা করে তা লিখে করে। তাদের বেলায় কি এটা খাটে?
আপনি যদি এটাই মনে করেন যে কলম শুধু লেখাতেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে আপনার জ্ঞানের পরিধি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অস্ত্র মানুষের মগজ ধোলাই করতে পারে না। তাজা রক্ত ঝরলে যে কেউ অস্ত্রধারীকে সন্ত্রাসী ভাবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কলম দিয়ে যে সন্ত্রাসটা হয় সেটা হয় ভেতরে ভেতরে। কলম দিয়ে মানুষের মগজ ধোলাই করা যায়। মানুষের মনে ঘৃণার বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে কলমওয়ালাদের ঘৃণার বিষেই ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে মানুষ অস্ত্র ধরতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে ধর্মান্ধতা ও ধর্মব্যবসার যে জোয়ার চলছে তাতে দেখা যাচ্ছে ধর্মান্ধদের কারণে তরুণ সমাজ ধর্মের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে। ধর্মান্ধরা দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করে না। তাদের কর্মকাণ্ড সব পরকালকেন্দ্রিক। এরা চোখ-কান বুঁজে কোনমতে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার তালে আছে। তাই এরা রাজনীতিতে যায় না, বিচারক হয় না, ডাক্তার হয় না, ইঞ্জিনিয়ারিং শিখে না, আইনশৃংখলা বাহিনীতে যোগ দেয় না। এরা পড়ে থাকে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডার চৌহদ্দীতে। অপরদিকে ধর্মকে ঘৃণাকারী, ধর্মকে পশ্চাদপদ ধারণা বলে যে অংশটি দুনিয়া নিয়ে পড়ে আছে তারা দুনিয়াদারীর সব কিছুর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যে পদগুলো দরকার তা তারা দখল করে নিচ্ছে একচ্ছত্রভাবে। এরা ধর্মকে আফিম হিসেবে জানে। একারণে ধর্মবিশ্বাসীরা তাদের সহানুভুতি, করুণা ও সহযোগিতার সামান্য অংশও লাভ করে না। এদের কথা, এদের দুঃখ রাষ্ট্র শোনে না। এর ফলে বঞ্চিত এই শ্রেণিটির একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগায় একশ্রেণির সুবিধাবাদী নেতা যারা ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করে। এদের দিয়ে ঘটাতে থাকে ধ্বংসাত্মক কাজ।
এখন সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই অবস্থা থেকে মুক্তি কিভাবে আসতে পারে? এর উত্তরও খুব সোজা। উভয়কেই উভয়ের স্থান থেকে ছাড় দিতে হবে। প্রথম ধর্মের নামে যে সব অপধর্ম চালু আছে তা বাদ দিতে হবে। মতভেদ, ফেরকা ইত্যাদি নিয়ে ধর্মাশ্রয়ীদের মধ্যে যে অনৈক্য আছে তাকে ঠেলে পিছনে ফেলতে হবে। ধর্মের উদ্দেশ্য মানবকল্যাণ- এই বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে ধর্মচর্চা করতে হবে। যে বিষয়গুলো মানবকল্যাণে কাজে আসছে না, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, অনৈক্য আর সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে একটু যাচাই বাছাই করলে দেখা যাবে সেগুলো ধর্মের বিষয় ছিল না। সেগুলো কায়েমী স্বার্থবাদীরা অতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে যোগ করেছে। প্রকৃত আলেমদের কাজ হবে সেগুলোকে ধর্ম থেকে বাতিল করে দেওয়া। তাহলে দেখা যাবে ধর্ম তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে, স্বচক্ষে দেখা যাবে ধর্ম কত তরুণ, গতিশীল। ধর্মবিরোধীরা তখন ধর্মকে আর বুদ বানিয়ে দেওয়ার আফিম বলতে পারবে না।
আর কথিত মুক্তমনা উগ্রবাদীরা তাদের কাজকে যদি মানবকল্যাণে ব্যয়িত বলে দাবি করে থাকেন তবে তাদেরকে উগ্রতা ত্যাগ করতে হবে। পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ আস্তিকের বিশ্বাসকে উপড়ে ফেলার চিন্তা অবাস্তব, খাম-খেয়ালীপনা ছাড়া কিছুই নয়। আর আঘাত করলে তা প্রত্যাঘাত হয়ে ফিরে আসবে- এটাই তো স্বাভাবিক। আপনি কলম দিয়ে করছেন বলেই যে প্রতিপক্ষও কলম নিয়ে আসবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। বিজয়ী হওয়াই যেহেতু লক্ষ্য সেহেতু যে অস্ত্র দিয়ে যে যোদ্ধা পারদর্শী সে সেই অস্ত্রই ধারণ করবে। কাজেই আঘাত না করে তার চেয়ে বরং তাদেরকে সুস্থাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করুন। আপনারাই রাষ্ট্রের কর্ণধার। সঠিক ধর্মের জ্ঞান দিয়ে তাদের আমলকে রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজে লাগান। দানবের এই দুই হাতকে বাঁধার একমাত্র উপায় এটাই। কোন হাতকেই শক্তিশালী করে লাভ নেই। মনে রাখতে হবে পাগলা ষাঁড় যত শক্তিশালী তা মানুষের জন্য ততই হুমকিস্বরূপ। এই দুই পক্ষের পাগলামীকে যত প্রশ্রয় দেওয়া হবে, শক্তিশালী করা হবে আমাদের জন্য তা ততই বিপদ ডেকে আনবে।

লেখক: হেযবুত তওহীদের সদস্য, রংপুর।

Comments
Loading...