ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে হতাশ কাউনিয়ার কৃষক
মিজান,কাউনিয়া প্রতিনিধিঃ পাঁচশো টাকার নিচে ধানকাটা শ্রমিক পাইনি। বিঘাপ্রতি গড়ে প্রায় ১৩ হাজার টাকার মতো খরচ। ফলন ১৭ থেকে ১৮ মণ। কিন্তু বাজারে দাম নেই। প্রতিমণ মোটা ধান ৫শ টাকা ও চিকন ধান ৭শ টাকা। আমরাতো আর পারছিনা। গত মৌসুমেও লাভের মুখ দেখিনি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।’ রংপুরের কাউনিয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না পাওয়ায়, এভাবেই হতাশার কথা ব্যক্ত করেন উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, সরকার ভর্তুকি দিয়ে চাল দিচ্ছে। এর প্রভাবে চালের বাজারেও ধস নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচবে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ১২ হাজার ৬শ ৫২ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭ হাজার ৯শ ৯০ হেক্টর জমি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদের আওতায় আসে ৮ হাজার হেক্টর জমি। এবারে উপজেলায় আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মনে করছে কৃষি দপ্তর।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গোপীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতবছর নিজের আট বিঘা জমিতে ধান করে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছিলো। তাই এবছর এক বিঘা রেখে বাকি জমি ভাগে দিয়ে দিয়েছি। ওই একবিঘা করতেই নিজের শ্রমসহ প্রায় ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। তাই ধান বিক্রি করবো না। বাড়িতে খাওয়ার জন্য রেখে দিবো। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচবে না। একই এলাকার কৃষক আজমল হোসেন জানান ‘শুনছি সরকার বেশীদরে ধান কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তাহলে হয়তো মোটা ধানচাষীরা কিছুটা হলেও বাঁচতে পারবে। আর তা নাহলে সেই লাভবান হবে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। কিন্তু চিকন চালের ধানচাষীদের বাঁচার পথ নেই।’ অপরদিকে উপজেলার কূর্শা ইউনিয়নের রামনাথ গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে ব্রি-৫৫ জাতের বোরো ধান চাষ করেছিলেন। জমি নিজের হওয়ায় তার বিঘা প্রতি প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান পেয়েছেন ১৪ থেকে ১৫ বস্তা করে। নিজের পারিশ্রমিক ধরলে লাভের মুখ দেখা যাবে কিনা- সে বিষয়ে সন্দিহান তিনি।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ধানের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া পোকার আক্রমণও কম ছিলো। পাকা শুরু হলে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় ধান গাছ শুয়ে পড়েছিলো। এতে তেমন ক্ষতি হয়নি। এজন্য আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। তবে দাম নিয়ে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এভাবে চলতে থাকলে পেশা হিসেবে ‘কৃষি’ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার অধিক, ফলনও খুবই ভালো। বেশীর ভাগ কৃষকরা ইতোমধ্যে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। কিছু মাঠ বাদে সব ধান ঘরে উঠে গেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদনও বেশি হবে। কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার দরের বিষয়টি নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। তবে শুনেছি খাদ্যবিভাগ সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে, সেটা হলে হয়তো কৃষকরা লাভবান হবেন।