বাগেরহাটে নাজমা সন্তানকে কাছে রাখতে চান
এসএম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: সামাজিক নিরাপত্তা ও দরিদ্রতা জয়ে কিশোরী চেহারা লুকিয়ে যুবক সাজে ‘নাজমা’। দু’বেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য ভ্যান চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় সে। কিন্তু লম্পটের লালসার শিকার হয়ে এখন সে কুমারী মা।মাত্র ১৫ বছর বয়সে কোনো স্বজন বা পরিবারের সদস্য ছাড়াই হাসপাতালের বিছানায় শিশু সন্তানকে নিয়ে থাকছেন তিনি। হাসপাতালে থাকায় নেই উপার্জন। তাই নেই পর্যাপ্ত খাবারও। হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার খেয়ে তাই এখন বেঁচে থাকা।এমন পরিস্থিতিতেও কুমারী মা নাজমা আক্তার চান সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে। কিন্তু কিভাবে চলবে তার জীবন? কি তার সন্তানের ভবিষ্যত? এই সমাজ কি তাকে গ্রহণ করবে? এমন প্রশ্নে নিজেই নিজের কাছে বিদ্ধ হচ্ছেন নাজমা। বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে শরণখোলার স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর কাছে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি হাসপাতালে উৎসুক জনতার নিস্তার থেকে রক্ষা পেতে আকুতি জনিয়েছেন।এসময় সন্তানকে নিজের কাছে রাখারও আকুতি জানান তিনি।
এদিকে বুধবার দুপুরে হাসপাতালে নাজমাকে দেখতে যান শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতুল মন্ডল। এসময় তিনি চিকিৎসাধীন নাজমা ও তার নবজাতক সন্তানের খোঁজ খবর নেন এবং তাদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।হাসপাতাল ঘুরে এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, নাজমা ও তার নবজাতক সন্তানের উন্নত চিকিৎসাসহ বাসস্থানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।নাজমুল পরিচয়ে চলা বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের নাজমার সার্বিক সহায়তা ও পুনর্বাসনে সমাজের বিত্তবান ও এনজিওদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, মঙ্গলবার নাজমাকে নিয়ে ‘বাগেরহাটেপুরুষের নবজাতক দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়!’ খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যক্তি তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করেছেন। তারা মেয়েটিকে সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন।
শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান বলেন, করে।বিষয়টি জানার পর আমি নাজমার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর কাউকে হস্তক্ষেপ না করার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানাই। প্রায় দেড় বছর আগে স্থানীয়রা একবার তাকে প্যান্ট-শার্ট পরা অবস্থায় আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন সে দারিদ্রতার কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্য এমন পোশাক পরে রিকশাভ্যান চালায় বলে দাবি দীর্ঘদিন ধরে সার্বক্ষণিক পুরুষ ছদ্মবেশের কারণে এলাকার বেশিভাগ মানুষ নাজমাকে ছেলে বলেই জানতো। বর্তমানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।
শরণখোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, নাজমার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তার বর্ণনা শুনে মনে হয়েছে, সামাজিক ও মানবিকতার এক চরম অবক্ষয় ঘটেছে। অভাব, দরিদ্রতার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য পুরুষের ছদ্মবেশে থাকতো নাজমা। কিন্তু তাতেও লম্পটদের লালসার হাত থেকে রেহাই পায়নি সে। নাজমা কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া নাজমাকে সামাজিক জীবনযাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, বর্তমানে কিশোরী মা নাজমা ও তার সন্তান সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালে তার সুচিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়েছে।সামজিকতা ও লোকলজ্জার কারণে এখনও হাসপাতালে নাজমার পরিবারের কেউ আসেনি। মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়া নাজমার অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো বলেও দাবি করেন তিনি।শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম জানান, কেউ যেন নাজমার উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এ জন্য তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে সার্বক্ষণিক একজন নারী পুলিশ কনেস্টবেলসহ দু’জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) ভোর রাতে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কিশোরী নাজমা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় পুরুষ বেশে চলা নাজমুল ওরফে নাজমার সন্তান হওয়ার খবরে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর