Connecting You with the Truth

বেশি আদা খাওয়া কেন ভালো নয়?

it-3রকমারি ডেস্ক:
আদা- এই ভেষজ উপাদানটি রান্নার কাজে এবং ঔষধ হিসেবে প্রায় ৫০০০ বছরের উপরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিশেষ করে এশিয়ান দেশগুলোতে। আদার ঔষধি গুনাগুনের জন্য এটা পৃথিবীর বহুল ব্যবহৃত ভেষজগুলোর মাঝে অন্যতম এবং এটা আয়ুর্বেদিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মাঝে বিশুদ্ধ মশলা হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু যেকোনো কার্যকর ও শক্তিশালী ঔষধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আদার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি বেশি পরিমাণ আদা গ্রহণ করা হয় তাহলে পেট ব্যাথা, পেটফোলা, বমিবমি ভাব, বুকজ্বালা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে এর এন্টিকোয়াগুলেন্ট প্রকৃতির কারণে এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই ভেষজবিদরা বেশি আদা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

কাদের জন্য আদা না খাওয়াই উচিত:

যাদের ব্লিডিং ডিসঅর্ডার/হেমোফিলিয়া আছে-
আদা রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে রক্তের প্রবাহকে বৃদ্ধি করে রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে যার ফলে রক্তপাতের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে বিশেষ করে রক্ত জমাট বাঁধাকে ধীর গতি করার ঔষধের সাথে মিশে গিয়ে হলেও।

পিত্তথলিতে পাথর আছে যাদের-
আদা পিত্তথলিতে অবস্থিত বাইল সল্টের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। সুতরাং যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা একদমই আদা খাবেন না।

যাদের জ্বালাপোড়া/ঘা রয়েছে-
যাদের খাদ্যনালীর নিুাংশে ব্লক, ঘা বা কোন ধরনের জ্বালাপোড়া রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ টাটকা আদা খেলে খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমনকি খাদ্য নালীর নিুাংশে বাধারও সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য-
আদার রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্টের জন্য গর্ভবতী নারীদের এটা না খাওয়াই ভালো।এটা জরায়ু সঙ্কোচন করে এবং সেই সাথে আয়রন ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো শোষণে বাধা দেয়। বেশি পরিমাণ আদা মিসক্যারেজের সম্ভাবনাও থাকে। তবে যদি খেতেই হয় তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়টারী সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল/ট্যাবলেট হিসেবে আদা গ্রহণ করতে পারেন।বিশেষ করে গর্ভবস্থার শেষ সপ্তাহে কোন ভাবেই খাওয়া উচিত না।

ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে-
যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত আদা চা খেলে এটা এর বিভিন্ন ঔষধের সাথে মিশে রক্তচাপ ও রক্তের সুগার কমাতে সাহায্য করে কিন্তু অবশ্যই যারা অ্যাসপিরিন ও ওয়ারফিন জাতীয় রক্ত সংকোচন ও তরলীকরনের জন্য ঔষধ খান তাদের জন্য খাওয়া ঠিক না কারণ তাতে উল্টো ফল হতে পারে।

অপারেশনের আগে-
২০০৭ সালে Der Anaesthesist নামক একটি আর্টিকেলে প্রকাশিত হয় যে অপারেশনের আগে আদা খেলে বেশি রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। সুতরাং যেকোনো ধরনের অপারেশনের কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে থেকে আদা না খাওয়াই ভালো।

সম্ভাব্য ভেষজ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার জন্য-
যখন কিছু ভেষজ উপাদান যেমন হলুদ, রসুন,লবঙ্গ,গিংকো,জিনসেং,বিলবা ইত্যাদি রক্ত জমাট বাধাকে ধীর ও সঙ্কুচিত করে তখন সেগুলোর সাথে যদি আদা মিশে তাহলে এর গুনাগুন বেড়ে যায় এবং রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আদার এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায় যদি আদার সাপ্লিমেণ্ট ট্যাবলেট খাওয়া যায়, যা দেহে হজমের গতিকে ধীর করে রাখে পরিপাকতন্ত্রে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। কিন্তু আদার সাপ্লিমেণ্ট ট্যাবলেট আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। তবে যাই হোক আদা যদি কম পরিমানে খাওয়া হয় বা Food & Drug Administration(FDA) কর্তৃক স্বীকৃত পরিমাণে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর তেমন কোন খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

আদা গ্রহণের স্বীকৃত পরিমাণ-
সাধারণত ২ থেকে ৬ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ২ মিলিগ্রাম, বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৪ গ্রাম এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য ১ গ্রামের বেশি কোন ভাবেই গ্রহণ করা ঠিক না।

Comments
Loading...