মানুষের শেখা উচিত কুকুরটার থেকে!
পোষা জীবজন্তু যে মনিবের সঙ্গে বেঈমানি করে না, সেটা প্রচলিত কথা। কিন্তু তারই প্রমাণ আবারও পাওয়া গেল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের একটি ঘটনায়। শাহাজানপুরের কাছে দুধুয়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এক গ্রামের কৃষক গুরদেভ সিং-এর পোষা কুকুর এই ঘটনার নায়ক।
দিন-কয়েক আগে প্রচণ্ড গরমের কারণে বাড়ির বাইরে খাটিয়া পেতে ঘুমোচ্ছিলেন গুরদেভ। তার পাশেই শুয়েছিল পোষা নেড়ি কুকুর- জকি। হঠাৎই জাতীয় উদ্যানের দিক থেকে একটি বাঘের গর্জন শোনা যায়। তখন জকি চেষ্টা করতে থাকে তার মনিবকে ডেকে তুলতে, যাতে তিনি বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেন।
কিন্তু গুরদেভ সিংয়ের ঘুম এতই গভীর ছিল সেইরাতে, যে বাঘের গর্জন আর কানের পাশে পোষা কুকুরের চিৎকারেও তার ঘুম ভাঙে নি। আর ততোক্ষণে বাঘটি খুব কাছে চলে এসেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, মনিবের যখন শেষমেশ ঘুম ভাঙ্গে, তখন বাঘটা একেবারে সামনে।
ঘুমের ঘোর কাটিয়ে গুরদেভ যখন একটা মোটা লাঠি হাতে তুলে নিয়েছেন, ততোক্ষণে জকি নিজেই এগিয়ে গেছে বাঘের মোকাবিলা করতে। ছোট্ট কুকুরকে প্রথমে পাত্তাই দিতে চায় নি বাঘটি, তার টার্গেট সামনে থাকা গুরদেভ।
কিন্তু জকির একরোখা মনোভাব দেখে তাকেই প্রথমে তাকে খতম করে বাঘটি, তারপর তার ঘাড়ের কাছে কামড়ে ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে জঙ্গলের দিকে।
গুরদেভ আর তার প্রতিবেশীরা অনেকক্ষণের চেষ্টায় কিছুটা দূরের জঙ্গলে জকির মৃতদেহ খুঁজে পান। গুরদেভ সিং সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বছর চারেক আগে রাস্তা থেকেই ছোট্ট কুকুরটিকে নিয়ে এসেছিল তাঁর সন্তানেরা। প্রতিদিন তাদের স্কুল পর্যন্ত এগিয়ে দিতেও যেত জকি।
তাকে হারানোর শোকে একটা গোটা দিন খাওয়া দাওয়া করে নি গুরদেভের ছেলে-মেয়ে। “প্রতিদিন মাত্র কয়েকটা রুটি খেতে দিতাম ওকে। তার বিনিময়ে ও যে নিজের প্রাণ দিয়ে আমার জীবন বাঁচাবে, এটা অবিশ্বাস্য! মানুষের শেখা উচিত এদের দেখে,” বলছেন গুরদেভ সিং। বিবিসি বাংলা।