সঙ্কট নিরসনে সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
আন্দোলনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম
স্টাফ রিপোর্টার:
চলমান জাতীয় সঙ্কট নিরসনে সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হেযবুত তওহীদের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ১৯৯৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি সমস্ত পৃথিবীতে সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি আনয়নের উদ্দেশ্য নিয়ে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হেযবুত তওহীদের বর্তমান এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন।
তিনি হেযবুত তওহীদের সকল সদস্য-সদস্যার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলেন- বিগত ২০ বছর যাবৎ মানবতার কল্যাণে আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিতপ্রাণ হেযবুত তওহীদের সদস্যরা শত প্রতিকূলতার মাঝেও দৃঢ়তার সাথে কাজ করে গেছেন। তারা আত্মীয়-স্বজন, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ইনশা’আল্লাহ তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে এর উত্তম প্রতিদান পাবেন। তবে যেদিন পৃথিবী থেকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর হয়ে মানুষ শান্তিময় জীবন লাভ করবে কেবল তখনই আমাদের এই ত্যাগ প্রকৃত সার্থকতা লাভ করবে।
হেযবুত তওহীদের এমাম দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন- দেশে বর্তমানে যে সহিংসতা ও সন্ত্রাস চলছে তা থেকে রক্ষা পেতে হলে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অনেকে বলছেন এটা রাজনৈতিক সঙ্কট। আমরা মনে করি শুধু রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, এটা জাতীয় সঙ্কট। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি। এর বিরুদ্ধে সকলকে কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা না চালালে এ সমস্যার সমাধান কোনোভাবেই হবে না। দেশবাসীকে এই অন্যায়-অবিচার, সহিংসতা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে দু’টি কারণে। প্রথম কারণ, ধর্মীয় দায়িত্ববোধ। মোটামুটি আমরা সবাই আল্লাহ ও রসুলকে বিশ্বাস করি, পরকালকে বিশ্বাস করি, জান্নাত-জাহান্নাম বিশ্বাস করি। কাজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদেরকে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখা উচিত। মানুষ হিসাবে আমাদের ধর্ম কী? আমাদের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। সকল ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ। মানবতা হচ্ছে- প্রথমে অন্য মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিজ হৃদয়ে অনুভব করা। তারপরে সেটা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসা। যার মধ্যে মানবতা নেই, সে ধর্মহীন। মানুষকে অন্যায়-অবিচার, অশান্তিতে নিমজ্জিত রেখে এবং ওই অশান্তি নিরসনে প্রচেষ্টা না চালিয়ে যতই নামাজ, রোজা করা হোক না কেন সব অর্থহীন, ওসবের কোনো মূল্য নেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার থেকে এখন আমাদের মুখ্য এবাদত হল মানুষকে চলমান সংকট থেকে, অকাল মৃত্যুর মর্মান্তিক পরিণতি থেকে মুক্তি দেওয়া, দেশে স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিস্থিতি স্থায়িভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
ইসলাম শব্দের অর্থ হলো শান্তি। মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিঃস্বার্থ ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টাই জেহাদ। এই জেহাদ করছে হেযবুত তওহীদ। এই জেহাদই করে গেছেন আল্লাহর সকল নবী রসুল ও মো’মেনগণ। সুতরাং এখন আমাদের প্রত্যেকের এবাদত, ধর্মীয় কর্তব্য, ঈমানী দায়িত্ব হলো এই অশান্তি থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করা।
তিনি বলেন- ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তার আরও একটি কারণ হচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। অনেকে আছেন যারা ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্বাসগতভাবে প্রস্তুত নয়। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান হলো, মানুষের নিরাপত্তাবিধানের জন্য এগিয়ে আসা এই মুহূর্তে আপনার সামাজিক কর্তব্য। আপনি এই সমাজে বাস করছেন, এই সমাজ থেকে নিশিদিন হাজারো সুবিধা ভোগ করছেন। এখানেই আপনাকে থাকতে হবে, তাই এই সমাজের প্রতি, এ জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি আপনি আজন্ম ঋণে আবদ্ধ। এদেশের আলো বাতাসে আপনি বড় হয়েছেন, এদেশের বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেছেন। আপনার সেই ঋণ পরিশোধের সময় আজ এসেছে। আজকে সমাজ যখন আক্রান্ত তখন তা থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের সামাজিক কর্তব্য, সামাজিক দায়বদ্ধতা।
সবশেষে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন- হে আল্লাহ! আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম, গোমরাহ ছিলাম। তুমি আমাদেরকে সত্যপথের সন্ধান দিয়েছ, আলোর পথে উঠিয়েছ। হে প্রভু! তুমি এই ১৬ কোটি বাঙালিকেও সেই আলোর পথে উঠাও। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ সঙ্কটে পতিত হয়েছে। এই পবিত্র মাটিকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা কর, এদেশের মানুষকে রক্ষা কর। তাদের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা কর। আমাদের সীমাবদ্ধতা ও অহংকার দূর করে দাও। সত্যের ধারক হওয়ার কারণে মিথ্যার দোসরদের কাছ থেকে আমরা বহু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। এবার তুমি সত্যকে বিজয়ী কর। এই জাতিকে সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবার তওফিক দান কর।