সাগরতলায় সুপেয় পানির বিশাল ভাণ্ডার!
সুপেয় পানি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকি সুপেয় পানির জন্যই হবে- এমন ভবিষ্যদ্বানী করেছেন অনেকেই। এমন সময় সাগতলায় খোঁজ পাওয়া গেল সুপেয় পানির বিশাল ভাণ্ডার! ব্যাপারটি এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। এটি শতভাগ সত্য বলে নিশ্চিত হলে পানি বিশেষজ্ঞদের মাথার চুল পাকার গতি কিছুটা যে কমবে তাতে সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি নেচার সাময়িকীর পাশাপাশি ডিসকভার ম্যাগাজিনেও বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এতে বলা হয়, গবেষকরা সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সাগর উপকূলে সুপেয় পানির মজুদের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বিজ্ঞানীরা এসব পানির মজুদ সম্পর্কে আগেই জেনেছেন। তবে তারা এটা জানতে পারেননি, এ চার স্পটে সুপেয় পানির মজুদ কত। কিন্তু গবেষকরা জানালেন, এর চার স্পটে মজুদ সুপেয় পানির পরিমাণ হবে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কিউবিক মাইল। প্রতি কিউবিক মাইল পানি ১.১ টিলিয়ন গ্যালনের (এক ট্রিলিয়ন=১০০০০০০০০০০০০০০০) সমান।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও শীর্ষ গবেষক ভিনসেন্ট পোস্ট বলেন, ‘গত এক শতকে আমরা যে পরিমাণ ভূগর্ভ পানি ব্যবহার করেছি, তার চেয়ে একশ গুণেরও বেশি পানি রয়েছে সাগরতলে। এ আবিষ্কারের অর্থ হচ্ছে খরা ও পানির দুষ্পাপ্যতার বিকল্পও রয়ে গেছে। আর সাগরতলায় সুপেয় পানির মজুদের সন্ধানের অর্থ হচ্ছে, আরও অনেক জায়গায় এ জাতীয় পানির সন্ধান পাওয়া যাবে।’
ভিনসেন্ট পোস্ট বলেন, সাধারণ ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে এসব পানি উত্তোলনের চেষ্টা মোটেও ঠিক হবে। তাতে পানির উৎসের ক্ষতি হবে পারে। এসব পানি তোলার জন্য যথোপযুক্ত প্রযুক্তি আগে স্থির করতে হবে।
জাতিসংঘের এক তথ্য চিত্রে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হয় পর্যাপ্ত পানি পায় না অথবা তাদের কাছে পৌঁছায় না যথাযথ মানের পানি। আগামীতে এই সঙ্কট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট ৯৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭শ’ কোটিই পড়বেন সুপেয় পানির সমস্যায়। তার মানে প্রতি তিন জন মানুষের মধ্যে দু’জনই নিরাপদ পানির সঙ্কটে ভুগবে। তখন বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে ভয়াবহ সুপেয় পানি সঙ্কট।
এতে আরও বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। উন্নত জীবনযাপনের পরিবর্তনে মানুষের দৈনিক মাথাপিছু পানির চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু নানা অপচয় ও বিভিন্নমুখী হস্তক্ষেপের কারণে অনেকস্থানে সুপেয় পানির উৎস সঙ্কুচিত, দূষিত এবং ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের প্রাণিজগৎ তথা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দেবে। তবে সাগরতলার পানির মজুত স্বল্প খরচে তোলা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।