Connecting You with the Truth

সুদখোর মহাজনদের বেড়াজালে আটকা পড়েছে বাঘা উপজেলার হতদরিদ্র মানুষ

বাঘা, রাজশাহী:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় সুদখোর মহাজনদের বেড়াজালে আটকা পড়েছে গ্রামের হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে তাদের অনেকে ইতোমধ্যে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় শতাধিক সুদখোর মহাজন বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এলাকার সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক অস্বচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে সুদি কারবার করে চলেছে এসব অর্থলোভী মহাজন। তারা এলাকার দরিদ্র মানুষের দৈন্যদশার সুযোগে চেক, বড়ি-ঘর, স্বর্ণালঙ্কার বা দামি জিনিসপত্র ইত্যাদি বন্ধক নিয়ে সাদা কাগজ বা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা দাদন দেন। পরে এসব ঋণ গ্রহিতাদের মাসে শতকরা ১০ থেকে ২০ টাকা হারে সুদ প্রদান করতে হয়। এভাবে প্রতি মাসের লভ্যাংশের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করলে সবকিছু স্বাভাবিক থাকে। বছরে দুইবার অর্থাৎ জুন ও ডিসেম্বর মাসে ক্লোজিংয়ের সময় মহাজনের হাতে সুদ-আসলে টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলেই যত বিপত্তি। হিসাব করে দেখা গেছে, সুদখোরদের খাটানো সুদের হার অনুযায়ী বার্ষিক শতকরা সুদ হয় ১৮০ টাকা। গ্রামের দরিদ্র লোকজন এ হারে সুদ প্রদান করতে পারে না প্রায়ই। ফলে এক সময় সুদের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে তারা তাদের শেষ সম্বলটুকু পর্যন্ত হারান। যারা এসব সুদখোরের কাছ থেকে দাদন নেন তারা কোনোভাবেই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এর আগে এ নিয়ে অত্র এলাকায় বিভিন্ন ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়গুলো থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল বলে জানায় এলাকাবাসি। শেষ পর্যন্ত সুদখোর মহাজনদের পেশি শক্তির কাছে পরাস্ত হতে হয় এসব ঋণগ্রহীতাদের। দুই-একজন মুখ খুললেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন।
জানা গেছে, তেপুকুরিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক এইচ এম সাঈদ দাদনের টাকা শোধ করতে না পেরে সুদখোরকে তার ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা স্বাক্ষর করে দিতে বাধ্য হন। তার জায়গাজমি বিক্রি করেও সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একই এলাকার ঝুন্টু সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এ ছাড়া আমোদপুর গ্রামের শফিকুল বেশ কিছুদিন আগে এক মহাজনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা সুদে-আসলে পরিশোধ করার শর্তে ঋণ নেন। ক্রমেই সেই টাকা বেড়ে প্রায় আট লাখ টাকা হয়ে যায়। অবশেষে তিনি টাকা দিতে না পেরে ছেলে-মেয়ে রেখে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে চণ্ডিপুর এলাকার পলান সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ঘরবাড়ি ফেলে পালিয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। আর একজন দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে বাঘা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল গফুর মিঞা বলেন, যেভাবে এ উপজেলায় সুদি মহাজনদের কারবার শুরু হয়েছে তাতে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এলাকার বেশির ভাগ লোক এর সাথে জড়িয়ে পড়বে এবং চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে সুদ প্রদানকারী মহাজনদের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, মানুষের প্রয়োজনের সময় টাকা দাদন দিয়ে আমরা তাদের উপকার করি। এর বিনিময়ে আমরা তাদের কাছ থেকে সামান্য পরিমাণ সুদ নিয়ে থাকি। এটাও যদি তারা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে আমাদের তো করার কিছু নাই।

Comments
Loading...